কোরবানী ঈদের দিন থেকেই কোরবানীর পশুর কাঁচা চামড়া বেচাকেনা শুরু হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ৎ নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়ার আড়তে। ছোট-বড় মিলিয়ে দেড় শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে নাটোরে। প্রতি বছর শুধুমাত্র কোরবানীর ঈদের সময়েই দেশের মোট চামড়ার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ চামড়া ঢাকার ট্যানারীগুলোতে পাঠানো হয় নাটোর বাজার থেকে। দেশের অধিকাংশ এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া আসে এই আড়তে। পরে তা প্রক্রিয়াজাত করে পাঠানো হয় ঢাকায় ট্যানারীতে। শুধু মাত্র উপজেলা ভিত্তিক কাঁচা চামড়াগুলো এসে পৌছালেও এখনো জেলার বাহিরের চামড়া আসেনি। যার ফলে ফাঁকা হয়ে আছে এই চামড়ার আড়ৎ। অন্যান্য বছর কোরবানীর ঈদের দুই দিন পর থেকে নাটোরের আড়তে চামড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবছর কোরবানীর ঈদের ৪দিন পার হলেও চামড়া নিয়ে আসেনি ব্যবসায়ীরা। এদিকে মৌওসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নাটোর বাজারে এবছর চামড়ার দাম একেবারেই কম। আর বরাবরের মতোই এবারো ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পেয়ে অর্থ সংকটের ফলে চামড়া কিনতে পারেননি নাটোরের আড়ৎদাররা। তবে কিছু কিছু ব্যবসায়ী বলছেন সময় মত সব চামড়াই নিয়ে আসবে ব্যবসায়ীরা আর তাতেই লক্ষ্যমাত্রা পুরন হবে। এদিকে ব্যবসায়ীরা যাতে কোন ধরনের হয়রানী না হয় বা নিরাপদে তারা ব্যবসা করতে পারেন সেজন্য চামড়া বাজারে নিয়মিত তদারকি করছেন নাটোরের পুলিশ প্রশাসন।
আফজাল হোসেন নামে এক মৌওসুমি ব্যবসায়ী বলেন, তিনি বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে ২০টি গরুর চাড়মা, ৫৫টি খাসী ও বোকরির চামড়া কিনে এনেছেন আড়তে বিক্রির জন্য। বাজারে নিয়ে আসার পর গরুর চামড়া ২শ থেকে ৪শ টাকায় প্রতি পিচ বিক্রি করছেন আর খাসির চামড়া ৩০ টাকায় বিক্রয় করেছেন তিনি। কিন্তু বোকরির চামড়ার কোন দাম নাই বলে তা বিক্রি করতে পারছেন না। ১২টা বোকরির চামড়া তাকে ফেরৎ নিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতিপিচ ৫ টাকা করেও দাম বলেনা আড়তদাররা।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা জেলা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌওসুমি ব্যবসায়ী তোফাজ্জল মিয়া বলেন, চামড়া বিক্রি করতে এসে সঠিক দাম পাচ্ছেন না তিনি। খাসি ও গরুর চামড়া কিনলেও বোকরির চামড়া কিনছেন না কোন আড়তদাররা। বাজার খুব খারাপ। চামড়া ফেরৎ নিয়ে গিয়ে সেই চামড়া সংরক্ষন করতে পারবেন না তিনি। সেজন্য প্রতি পিচ চামড়ায় লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন।
নাটোর আড়তের অনেক ব্যবসায়ী বলেন, আশেপাশের উপজেলা থেকে চামড়া চলে এসেছে এই আড়তে। কিছু চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের কাছেই লবনজাত করে রেখেছে। হয়তো ৮/১০ দিন পর থেকে পুরোপুরি ভাবে বেচা কেনা শুরু হবে। করেনা ভাইরাসের কারনে কোরবানী কম হয়েছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়া আসার সময় এখনো অনেক বাকী আছে সেকারনে এখনই কিছুই বলা সম্ভব না।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ সভাপতি লুৎফুর রহমান জানালেন, কাঁচা চামড়া পূর্বে কোন সময় রপ্তানী হয়নি। তবে ওয়েট ব্লু চামড়া যখন রপ্তানী হত তখন বাংলাদেশে চামড়ার বাজার অনেক ভালো ছিল। সেই সময় তারা চামড়া বিক্রি করে নগদ টাকা পেয়েছেন এবং ভালো লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ট্যানারী মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন না। এতে করে লোকসানে পড়ে আছে। তাদের পাওনা টাকা পেতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, তারা প্রতিবছর যে পরিমান চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারীতে প্রেরণ করেন এবারও সেই পরিমান চামড়া তারা সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকার নির্ধারিত দামে এখানকার ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয় করেছেন। চামড়ার দাম কম পাওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। অনেক মৌওসুমি ব্যবসায়ী তারা দাম না জেনই গ্রামে গ্রামে ঘুরে চামড়া কিনেছেন। বেশী দাম দিয়ে চামড়া কিনে এখন যদি কম দাম পায় তাহলে তাদের কিছুই করার নাই। এছাড়াও চামড়া দেখে কিনতে হয়। দক্ষ কসাই দিয়ে কোরবানীর পশু জবাই করতে হয়। অনেকে নিজেরাই পশু কোরবানী করেন। এতে করে অনেক চামড়ায় কাটা পড়ে। কোন চামড়ায় কাটা পড়লে সেই চামড়া এখানে কেনা হয়না। সেকারনে কাটা চামড়ার দামও এখানে পায়না। তাই অনেক চামড়া বাতিল হয়ে যায়।
চামড়া বাজার পরিদর্শন করে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটা প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। কোরবানীর দিন থেকে পরের দুই দিন কোন চামড়া ঢাকামুখি হতে পারবেনা। সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন চামড়া যেন পাচার হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এরজন্য চেক পোষ্ট ও ওয়াচ টাওয়ার করা হয়েছে। কোন অবৈধ সিন্ডিকেট করতে না পারে সেজন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এরসাথে চামড়া বাজারে সাদা পোষাকের পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দো পুলিশও কাজ করবে। চামড়া বাজারের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তারা নজরদারী করবেন।