নাটোর প্রতিনিধি:
সরকারী কোন অনুমোদন ছাড়াই নাটোরের গুরুদাসপুরের একটি বিদ্যালয়ের পাঁচটি তাজা মেহগুনি গাছ কেটে ফেলেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এমন অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে চাপিলা ইউনিয়নের ৪১ নম্বর চাপিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এভাবে প্রায় ৩৫ বছরের পুরাতন গাছগুলো কেটে ফেলতে দেখছেন নিরবেই। স্থানীয়রা বলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবির ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতাসহ ক্ষমতার দাপটে তারা এই গাছগুলো কাটছেন। তারা মনে করেন বিধিঅনুসারে যৌক্তিক কারন দেখিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার মাধ্যমে গাছের মূল্য নির্ধারন করে টেন্ডার দিয়ে উম্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে গাছগুলো কেটে বিক্রি করা দরকার ছিলো। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবী অনুমতি নিয়েই বিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির মাঠের পুর্বপাশের সীমানা সড়ক ঘেঁষে বেড়ে ওঠা সারিবদ্ধ পাঁচটি গাছের মধ্যে তিনটি কাটা হয়ে গেছে। আরো দুইটি কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন নিযুক্ত শ্রমিকরা। আর পাশেই দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবীর। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উৎসুক মানুষ তা প্রত্যক্ষ করছেন নিরবেই। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ।
ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শাহজাহান মোল্লা ও অভিভাবক সদস্য রুহুল আমিন বলেন , ৮৫ সালের দিকে তাঁদের অন্য সহপাঠীদের নিয়ে গাছগুলো পার্শ্ববর্তী মৌখাড়া হাট থেকে কিনে এনে বিদ্যালয় মাঠে রোপন করেছিলেন তারা। সময়ের সাথে সাথে গাছগুলো বেড়ে পরিপক্ক হয়ে ওঠেছে। এতে পরিবেশ ও বিদ্যালয়ের সোন্দর্য্য বৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ করেই প্রধান শিক্ষকের কথায় গাছগুলো কাটতে শুরু করে শ্রমিকরা। গাছগুলোতে কুঠারের আঘাত পড়ায় এলাকার ওই মানুষগুলোর হৃদয়ে আঘাত পড়ছে বলে মনে করেন তারা। তবুও কিছুই করার নাই তাদের। কারন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের হয়রানীতে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেকারনে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেনা। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার মাধ্যমে গাছের মূল্য নির্ধারন করা ও টেন্ডারের মাধ্যমে উম্মুক্ত ডাকে গাছগুলো বিক্রির বিধান থাকলেও তা অনুসরণ না করে তারা নিজেরাই কাটছে গাছ গুলো। এই গাছগুলো বাজারে বিক্রিয় করলে দুই লক্ষাধিক টাকা হবে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী করেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবীর দাবী করে বলেন বিদ্যালয়ের একটি বহুতল ভবন নির্মানের গাছগুলো বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে। এজন্য পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে একটি রেজুলেশনও করা হয়েছে। তবে সেই রেজুলেশনের কপি দেখাতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি তিনি। তিনি আরো বলেন গাছগুলো কাটার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। এখানে এলাকাবাসীর কি সমস্যা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কেন বিদ্যালয়ের গাছ কাটতে অনুমতি নিতে হবে। তিনি প্রধান শিক্ষক তিনি ম্যানেজিং কমিটির সাথে বসে বিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওর্য়াডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) আব্দুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে উত্তর দিই। এভাবে কি কোন উত্তর দেয়া যায়। গাছগুলো প্রয়োজনে কাটা হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারনে কারো অনুমতি নেওয়ার সুযোগ হয়নি বলে দাবী করেন তাঁরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন বলেন, সরকারিবিধি অনুসরন না করেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কেটেছেন এমন কথা তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।