পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সম্প্রতি বাজারে বেশি দামের কারণে সংস্থাটির ট্রাকে ক্রেতাদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। আবার মধ্যম আয়ের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ জন্য গতকাল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ধুম পড়ে যায় বিক্রির।
সম্প্রতি তিন ঘণ্টায় একটি প্রতিষ্ঠানের দেড় টন পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়। আরেকটি প্রতিষ্ঠান দুই ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে। তিন ঘণ্টায় দুই হাজার কেজি বিক্রি শেষ হয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গতকাল সোমবার টিসিবির পেঁয়াজ বরাদ্দ পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান দুপুর থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু করে। শুরুতেই কেনাকাটায় বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন ক্রেতারা। গত রোববার সন্ধ্যায় সুপারশপ স্বপ্ন অনলাইন ও চালডাল ডটকমকে দেড় টন করে তিন টন পেঁয়াজ বরাদ্দ দেয় টিসিবি। দুপুর ১২টা থেকে স্বপ্ন ও সাড়ে ১২টা থেকে চালডাল টিসিবির পেঁয়াজ অনলাইনে ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু করে। একজন গ্রাহক একবারে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। সরবরাহ বা ডেলিভারি চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
এসিআই লজিস্টিকের স্বপ্ন সুপারশপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির হাসান নাসির সমকালকে জানান, দুপুর ১২টায় শুরুতেই ক্রেতাদের বেশ সাড়া মিলেছে। প্রথম দুই ঘণ্টায় ৪৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এর পরও ক্রেতাদের অনেক অর্ডার এসেছে। টিসিবির বরাদ্দ দেওয়া দেড় হাজার কেজি পেঁয়াজ এক দিনেই দরকার। কিন্তু টিসিবি এক দিন পরপর দেড় টন পেঁয়াজ বরাদ্দ দেবে। অনলাইনে বিক্রিতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, প্রথম দিনে ধানমন্ডি, গুলশান ও বনশ্রী এলাকা থেকে পেঁয়াজ কেনার অর্ডার বেশি এসেছে। করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। এ কারণে সব শ্রেণিপেশার মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ কেনায় বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে যৌথভাবে আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের হেড অব গ্রোথ ওমর শরীফ সমকালকে বলেন, টিসিবি থেকে দেড় টন পেঁয়াজ বরাদ্দ পেয়েছেন। এই পেঁয়াজ দুপুর সাড়ে ১২টায় বিক্রি শুরু করে সাড়ে ৩টায় শেষ হয়েছে। এই বেচাকেনা প্রমোশন ছাড়াই হয়েছে। তিনি বলেন, অনলাইনে গড়ে প্রতিদিন তাদের তিন টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। টিসিবি বরাদ্দ দিয়েছে দেড় টন। এ কারণে কম দামে পেয়ে ক্রেতারা দ্রুত কিনেছেন। অনেক ক্রেতা না পেয়ে কল দিয়েছেন। তাদের তালিকা করে রেখেছেন। টিসিবি আবার পেঁয়াজ দিলে ফোন করে অর্ডার নিয়ে পৌঁছে দেবেন। এই ক্রেতাদের বেশিরভাগই মিরপুর, রাজারবাগ ও উত্তরার। তিনি আরও বলেন, যারা লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না, তারা সহজেই অনলাইনে কিনছেন। ক্রেতাদের চাহিদা ভালো থাকায় চলতি সপ্তাহের মধ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে টিসিবি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত রোববার জুম প্ল্যাটফর্মে টিসিবির ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, অনেকেই সামাজিক কারণ ও সময়ের অভাবে রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে পারেন না। এ ছাড়া টিসিবির ট্রাকসংখ্যা বাড়ানোর সক্ষমতাও সীমিত। তাই অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি।
অনলাইনে বিক্রির সঙ্গে ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। পরে আরও যোগ হবে। আপাতত এ সেবা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত থাকবে। এ ছাড়া ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ডিলারদের ২০০ থেকে ৪০০ কেজি বরাদ্দ দিয়ে খোলা ট্রাকে বিক্রি করছে টিসিবি। ঢাকায় ৪০টি ট্রাকসহ সারাদেশে ২৭৫টি ট্রাকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা খোলা ট্রাক থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। অনলাইনে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ক্রেতারা কেনায় কেজিতে ৬ টাকা দাম বেশি।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির জানান, অনলাইনে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে এই দুটি শহরে পেঁয়াজের ট্রাক প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
ভারত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছে। হঠাৎ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। তবে গতকাল রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।