ডেস্ক নিউজ
দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে এককালীন আড়াই হাজার টাকা বিতরণ কর্মসূচিতে দুর্নীতির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি সুবিধাভোগী নির্বাচনের শর্ত ও তাঁদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন প্রথম আলোর কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টিং শরিফুজ্জামান।
প্রথম আলো: সুবিধাভোগী নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এটা ঠেকাতে সরকার কী করছে?
আহমদ কায়কাউস: একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে নগদ আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশির ভাগ তথ্য সঠিক নয়। আর তালিকায় নাম থাকলেই কেউ নগদ টাকা পেয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়।
প্রথম আলো: সারা দেশে এত বড় কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে, এই নিশ্চয়তা কীভাবে দিচ্ছেন?
আহমদ কায়কাউস: এই নিশ্চয়তা দেওয়ার শক্তি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। একজন সুবিধাভোগীকে তিনটি উপায়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সঠিক ব্যক্তি। প্রথম হচ্ছে, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, দ্বিতীয় হচ্ছে, তাঁর মোবাইল নম্বর এবং তৃতীয় হচ্ছে তার নাম। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই তিনটি তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে তার নাম বাদ পড়বে। এখানে কারও চেষ্টা বা তদবিরের সুযোগ থাকছে না।
প্রথম আলো: স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তালিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের একটি অংশ তো নানাভাবে পছন্দের লোককে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটা কি ঠেকানো সম্ভব?
আহমদ কায়কাউস: স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই তালিকা তৈরি করেছে। তারপরও বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ছে। অন্ধের মতো ওই তালিকা অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি বলেই ত্রুটিগুলো ধরা পড়ছে। এখন ৫০ লাখ সুবিধাভোগী বাছাই করে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের চ্যালেঞ্জ এবং এটা করা সম্ভব। এখানে পুরো কাজটি দেখভাল করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই কাজে সহায়তা করছে।
প্রথম আলো: এ পর্যন্ত কী ধরনের অসংগতি পেয়েছেন, কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
আহমদ কায়কাউস: এখনকার পরিস্থিতিতে নগদ টাকা পেতে অনেকেই চেষ্টা করবে, এটা স্বাভাবিক। একটি উদাহরণ দেই; সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কর্মচারীদেরও প্রচুর আবেদন এসেছে। তাদের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু তারা এই ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর মধ্যে পড়ে না।
প্রথম আলো: অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের আবেদনসংখ্যা কেমন ছিল? এসব আবেদন কী করলেন?
আহমদ কায়কাউস: এমন সাবেক কর্মচারীদের আবেদন পাওয়া গেছে প্রায় এক হাজার। আমরা এগুলো বাতিল করে দিয়েছি।
প্রথম আলো: তাহলে আপনারা মোট কতগুলো আবেদন বাতিল করেছেন? বাতিলের কারণগুলো কী কী?
আহমদ কায়কাউস: আমরা সফটওয়্যারে ৫০ লাখ মানুষের তথ্য আপলোড করেছি। শুরুতেই ১০ লাখ বাতিল হয়ে গেছে। আরও বাতিল হবে। কারণ তাদের নাম, পেশা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অসংগতি আছে।
প্রথম আলো: ১০ লাখ শুরুতে বাদ হয়ে হলে ঈদের আগে ৫০ লাখ মানুষকে এই সুবিধা দেবেন কীভাবে?
আহমদ কায়কাউস: এটা চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে দেওয়া হচ্ছে। এখনই একসঙ্গে সবাইকে নগদ টাকা দিয়ে দিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। সরকারের লক্ষ্য এখানে খুবই পরিষ্কার, প্রাপ্য মানুষের হাতে টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এই সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নয়, এমন কেউ যাতে না পায় সেটা নিশ্চিত করা বড় দায়িত্ব। এ জন্য তালিকাটি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখন নতুন সুবিধা প্রত্যাশীদের নাম সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রথম আলো: ৫০ লাখ মানুষ টার্গেট করার যুক্তি কী? সরকার এর বেশি বা কম করল না কেন?
আহমদ কায়কাউস: যারা দৈনন্দিন কাজ করে খেতো, তাদের এখন কাজ নেই এবং আয়ের পথ বন্ধ। তাদের কথা চিন্তা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এই ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ-শ্রমিক, কৃষক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও সংবাদপত্রের হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। প্রতি পরিবারে ধরা হয়েছে চারজন সদস্য, সেই হিসাবে এই নগদ সহায়তায় উপকার-ভোগী হবে ২ কোটি মানুষ। বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে এই তহবিল বিতরণ করা হবে।
প্রথম আলো: তারপরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনিয়ম চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি নিজের বা আত্মীয়-স্বজনের মুঠোফোন নম্বর দিচ্ছেন। একাধিক নামের বিপরীতে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হচ্ছে।
আহমদ কায়কাউস: অনিয়মের চেষ্টা কেউ কেউ করতে পারে। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, তাতে লাভ হবে না। সুবিধাভোগীর তিনটি তথ্য মিলতেই হবে, দুটি মিললেও কিন্তু হবে না।
আমি বলব, এই জালিয়াতি করাটা খুব কঠিন। ধরা যাক, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, একজন জনপ্রতিনিধি একাধিক নামের বিপরীতে একটি মোবাইল নম্বর দিয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যার একটির বেশি মোবাইল নম্বর নেবে না। আবার যাদের নাম সুবিধা প্রত্যাশী হিসেবে এসেছে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ও পেশা উল্লেখ আছে এবং এই পরিচয়পত্র ন্যাশনাল ডেটাবেইস সংযুক্ত রয়েছে। সফটওয়্যার সেসব তথ্য কিন্তু সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। তাই তালিকা পাঠালেই নগদ টাকা চলে যাবে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। তারপরও যদি কেউ অনিয়মের চেষ্টা করে তাহলে রেহাই পাবে না। কারণ এই রেকর্ডগুলো কিন্তু সরকারের কাছে রয়ে গেল। এটা খতিয়ে দেখারও সুযোগ থাকছে।