ধু-ধু জলরাশির উত্তাল ঢেউ। সুদূর সৈকতের অবারিত দ্বীপ-বনাঞ্চল। এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপা সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। গঙ্গামতির চর বা লালকাঁকড়ার দ্বীপ, ঝাউবন, লেবুবাগান, কাউয়ারচর, রাখাইন পল্লীসহ যেখানে সৈকতের ভাঁজে ভাঁজে দেখা মেলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
এ ছাড়াও বড় আকর্ষণÑ একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল দৃশ্য উপভোগ করা যায় কুয়াকাটায়। সরেজমিন পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাগরপারে দুদিন অবস্থান করে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। সরেজমিন গত ২ অক্টোবর দেখা যায়Ñ করোনাভাইরাস সংক্রমণের অবস্থা যেমনই হোক কুয়াকাটা সৈকতে ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। কুয়াকাটা শহরের প্রধান পয়েন্টে সৈকতে দিন-রাত ছিল জমজমাট অবস্থা। সৈকতে সাগরের প্রবল ঢেউয়ের সঙ্গে আপনমনে খেলায় মত্ত ছিলেন নানা বয়সিরা। সৈকতকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও জমে উঠেছে কুয়াকাটায়। ঘোড়ার পিঠে সৈকত ভ্রমণ ও মোটরবাইকে অবাধ ঘোরাফেরাসহ সেলফি-ছবি তোলার ধুম লেগে যায় কুয়াকাটায়। তবে সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটনবান্ধব তেমন কোনো সুব্যবস্থা চোখে পড়েনি, যা সৌন্দর্য তার সবই প্রায় প্রাকৃতিক।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী সময়ের আলোকে এ প্রসঙ্গে জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এক স্থান হলো কুয়াকাটা সৈকত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে যাতে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে সৈকতের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হতে পারে। সৈকতের সৌন্দর্য ও সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করতে গত ২ অক্টোবর কুয়াকাটার ‘সমুদ্রবাড়ি রিসোর্ট’ থেকে ভোর পৌনে ৫টার দিকে রওনা হতে হয়। মোটরবাইকযোগে কিছু সময়ের মধ্যেই কুয়াকাটা সৈকতের প্রধান পয়েন্ট দিয়ে ‘বিচের’ ওপর দিয়েই এগোতে থাকি। এমন ভোরেও তখন শত শত মোটরবাইকে সৈকতে বেরিয়েছিলেন পর্যটকরা। সবার গন্তব্য সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির দ্বীপে। সময় ও সৈকতের পথ ধরে মোটরসাইকেল বেশ দ্রুতগতিতেই এগোচ্ছিল। বুকভরা নিশ^াসের সঙ্গে ভোরের আলোয় সমুদ্র ও তীরবর্তী প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছিলÑ এ যেন কোনো স্বপ্নের রাজ্য। ধীরে ধীরে আলো বাড়ছিল। তখন ঝাউবনসহ নানা প্রজাতির উপকূলীয় গাছপালার সঙ্গে সৈকতের আলিঙ্গন যেন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টিকে নিয়ে সবাইকে ভাবনায় ফেলে দেয়। এমন সৌন্দর্য সরাসরি না দেখলে যথাযথ উপভোগ করা যায় না। তবে সৈকতের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলার সময় বালুর ক্ষত বা গভীরে আটকে যাচ্ছিলেন অনেকে। মাঝেমধ্যে একাধিক মোটরবাইক ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও পড়ে। অথচ সৈকত লাগোয়াভাবে ভালোমানের সড়ক তৈরি করা হলে একদিকে পর্যটকরা যেমন নিরাপদে চলাচল করতে পারতেন, তেমনি উপকূল রক্ষার কাজটিও হতো। এভাবে এগোনোর পর এলো সেই গঙ্গামতির দ্বীপ। যেখানে ট্রলারে করে পারাপার হতে হয়। মোটরবাইকসহ পর্যটকরা পর্যায়ক্রমে সবাই গেলেন গঙ্গামতির চর বা দ্বীপে। সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই দ্বীপে গিয়ে দেখা গেল আরও অবাক করা সৌন্দর্য। এই দ্বীপের সৈকতেই দেখা গেল অত্যন্ত আকর্ষণীয় লাল রঙের কাঁকড়া। প্রচুরসংখ্যক লাল কাঁকড়ায় সৈকত যেন লালচে রঙ ধারণ করে। তবে কাছাকাছি গেলেই খুব দ্রুতই বালির সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ছিল কাঁকড়াগুলো। এভাবে আরও এগোতেই এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কুসুম কোমল সূর্য যেন সাগরের পানি থেকে সদ্য গোসল সেরে উঠছিল। বঙ্গোপসাগরের বুকে পূর্ব আকাশের সেই দৃশ্য দেখে চোখ ফেরানো যায় না। কিছু সময় অবস্থানের পর সবাই ছুটলেন ঝাউবন ও কাউয়ারচরে। তারপর রাখাইন পল্লী বা মিশ্রিপাড়া। এভাবেই কুয়াকাটার পূর্বপ্রান্তে সৈকতের ভাঁজে ভাঁজে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় এলাকা ঘুরেফিরে অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা।
অন্যদিকে ওইদিন বিকালের পরপরই লেবুবাগান দ্বীপসহ আরও বেশকিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সঙ্গে শুরু হয় সূর্যাস্ত দেখার পালা। কুয়াকাটার এই পশ্চিমাংশেও আরেক সৌন্দর্য বিরাজ করছিল। হাজার হাজার পর্যটকের মিলনমেলায় সবাই মনোমুগ্ধকর সব দৃশ্য উপভোগ করেন।
এ সময় রাজধানী ঢাকার মিরপুর থেকে কুয়াকাটায় যাওয়া কয়েকজন পর্যটক বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য সম্পর্কে অনেকেই জানে বা শুনেছে কিন্তু সরাসরি কাছ থেকে দেখলে আরও বেশি অবাক হতে হয়। সৈকতকেন্দ্রিক প্রকৃতি এত সুন্দর হতে পারে তা কাছ থেকে না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু এই সৌন্দর্য সারা বিশ^কে জানাতে গেলে কুয়াকাটার আধুনিকায়ন তথা পর্যটনবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এখানে যা আছে সবই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রিক আধুনিক ব্যবস্থাপনা রাখা গেলে সারা বিশে^র পর্যটকরা এখানে আরও বেশি ভিড় জমাবেন। সরকারের রাজস্ব বাড়বে কয়েকগুণ।