ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সবসময়ই সম্ভাবনাময়ী। তার প্রমাণ যেন আরও একবার পেল সবাই। দেশের শিক্ষার্থীদের মেধা ও দক্ষতার পারফরম্যান্স দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জিতে নিল স্বর্ণপদক। ৩৭টি দেশের অংশগ্রহণে অর্থনীতির বিশ্বকাপে দারুণ ফল অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে ছিল জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি। এদের পেছনে ফেলেই অষ্টম স্থান অর্জন করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা তরুণরা। চীনে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিকস কাপে এসেছে এই অর্জন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পেয়েছে একটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য, চারটি ব্রোঞ্জসহ মোট ছয়টি পদক। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই আসর। গত বছরের মতো এবারও করোনা মহামারির কারণে পুরো প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে। বৈশ্বিক পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ এ বছর অংশ নেয় ৩৮টি দেশের ৫২টি দলের ২৬৫ জন প্রতিযোগী। বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে খুঁজে বের করার লক্ষ্যেই সূচনা হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিকস কাপের।
এবার বাংলাদেশ দলে ছিল মাস্টারমাইন্ডের জারিফ শাফাকাত ও মো. তানজিম হোসাইন, সানিডেইলের রাফায়েল জীবরান, স্কলাসটিকার সৈয়দ মুনতাসির তাসদিদ, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের আবরার জামিল ও সানবিমসের আরমিন আহমেদ। ছয় প্রতিযোগীর কোচ হিসেবে ছিলেন আখতার আহমেদ। প্রতিযোগীদের মধ্যে আবরার স্বর্ণ, জারিফ রৌপ্য ও বাকি সবাই ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। পদক জয়ের পাশাপাশি আবরার ও তাসদিদ স্থান পেয়েছে ‘ডিপ ফান্ডামেন্টাল’ রাউন্ডের সেরা দশে।
জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ইকোনমিকস অলিম্পিয়াড আয়োজিত প্রতিযোগিতায় প্রায় এক হাজার ৫০০ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ন্যাশনাল ক্যাম্পের জন্য বাছাই করে নেওয়া হয় ২২ সদস্যকে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে ছয় সদস্যকে নিয়ে তৈরি হয় অর্থনীতির বিশ্বকাপের ‘টিম বাংলাদেশ’।
এবারের আসরটি তিনটি ভিন্ন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে। বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে মূলত ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিকসের ভেতর থেকেই প্রশ্নগুলো করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিযোগীদের ১৫০ মিনিটের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে আনতে হয়। সর্বশেষ ধাপে তাদের একটি বিষয় দেওয়া হয়, যা থেকে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে দলগতভাবে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে হয় জুরিবোর্ডের সামনে। আর সেই প্রেজেন্টেশনের ভেতর সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা অবশ্যই থাকতে হবে।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তানজিম বলল, ‘আমাদের সবারই এই প্রথম এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা হলো। তাই বাংলাদেশকে অর্থনীতির এই বিশ্ব আসরে তুলে ধরার ব্যাপারটা মাথায় ছিল। অসাধারণ এ অর্জনে আমরা গর্বিত। দেশকে সম্মানিত করতে পেরে আমাদের দারুণ ভালো লাগছে। বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দেশ ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাফল্য বয়ে আনছে। আমরা সবসময় চাই, আমাদের এই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।’ অনলাইনে আয়োজন হলেও প্রতিযোগিতা বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল বলে জানায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। বিশ্বখ্যাত এমআইটি, অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত জুরিবোর্ড প্রতিযোগীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গত বছরের প্রথম আসরেও একটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে। শিক্ষা ও দক্ষতা নিয়েই আগামীদিনের জয়- পতাকা ওড়ানোর লড়াইয়ে আমাদের কিশোর-তরুণদের সাফল্য অব্যাহত থাকুক, এ প্রত্যাশা এখন সবার।