ডেস্ক নিউজ
অর্থনৈতিক কৃচ্ছ্র সাধন করে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো বাঁচাতে চায় সরকার। অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সরকার এরই মধ্যে তিনটি খাতে কৃচ্ছ্র সাধন শুরু করেছে। এর আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কোম্পানিগুলো জ্বালানি খরচের সর্বোচ্চ ৮০ ভাগ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে। সাশ্রয় করতে হবে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দের ২৫ ভাগ। এতে সরকারের ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে ধারণা।
কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য গত জুলাই মাসে অর্থ বিভাগ থেকে আরো দু’টি পরিপত্র জারি করা হয়। এর একটি হচ্ছে, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত-হ্রাসকরণ’, অপরটি ‘উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানি বাবদ ব্যয় স্থগিতকরণ।’ এ ছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্থান পাওয়া প্রকল্পগুলো ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ব্যয় হ্রাসকরণ।
প্রথম দু’টি কৃচ্ছ্র থেকে দুই হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে কৃচ্ছ্র সাধন কতখানি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তার ওপর। কারণ এর আগে সরকারি আমলাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল। এখন তাও চলমান রয়েছে। কিন্তু নানা অছিলায় এখনো অনেক আমলা বিদেশ ভ্রমণ করে চলেছেন। তাই এই কৃচ্ছ্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা যাবে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রথমটি হচ্ছে, ‘৩২৪৩১০১ (কোড)-পেট্রল, অয়েল (অকটেন) ও লুব্রিকেন্ট ও ‘৩২৪৩১০১-গ্যাস ও জ্বালানি’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ ভাগ ব্যয় করা যাবে।
দ্বিতীয় ‘বিদ্যুৎখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ ভাগ সাশ্রয় করতে হবে এবং তৃতীয় ‘এই খাতসমূহে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না’ অর্থাৎ বেঁচে যাওয়া অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পেট্রল, অয়েল, লুব্রিকেন্ট ও গ্যাস এবং জ্বালানি খাতের দু’টি কোডে চলতি অর্থবছরে বাজেটে দুই হাজার ৪২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ২০ ভাগ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হলে সরকারের অর্থ বাঁচবে ৪৯৩ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ খাতে ২০ ভাগ খরচ কমানো গেলে আরো কয়েকগুণ অর্থ বাঁচানো যাবে।
এ দিকে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন করে গত দুই অর্থবছরে ২৯ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে সাশ্রয় হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ কমানোর গেছে চার হাজার কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি বাহুল্য ব্যয় কমানো জন্য গাড়ি কেনা বন্ধ, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড়ও বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনার সময় গত দুই অর্থবছর থেকে সরকার কৃচ্ছ্র সাধনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রকল্পে গাড়ি ক্রয়, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়া অন্যতম। এ উদ্যোগের ফলে প্রথম বছরে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছরে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি থেকে পিছু হটা হয়েছিল। বন্ধ থাকা অনেক প্রকল্পে অর্থ ছাড়ও করা হয়েছে, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে গেল অর্থবছরে অর্থ সাশ্রয়ের পরিমাণ ছিল বেশ কম। কিন্তু এবার গাড়ি কেনা, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় বন্ধ করাসহ নতুন করে কর্মকর্তারা বিভিন্ন বৈঠকে যোগদান করে যে সম্মানী ভাতা পান, তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও কৃচ্ছ্র সাধনের জন্য চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলো ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীন দফতর/সংস্থাগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন যথানিয়মে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি (জিওবি) অংশের ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনূর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুসারে ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ করা অর্থ আবার যোগ করে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি গ্রহণপূর্বক) ‘এ’ ক্যাটাগরি চিহ্নিত প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করতে পারবে। এতে আরো ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।