ডেস্ক নিউজ
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা এবং সাগর উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জালে অসময়ে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ফলে জেলা শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে, দামও তুলনামূলক কম। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও তার আশপাশের নদ-নদীতে আহরিত ইলিশের দুই তৃতীয়াংশ জাটকা এবং জাটকা সাইজের একটু বড় ইলিশ। চাঁদপুর মাছের ঘাটসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, ইউনুছ, দেলোয়ারসহ অনেকে জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ শ মণ ইলিশ বড় স্টেশন মাছ ঘাটে আসছে। বেশি মাছ হওয়ায় স্ট্যান্ডার্ড সাইজের (গ্রেডের) ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। ইলিশ মৌসুমে সরকার ৫ শ মণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও তা অফসিজনেও শেষ হচ্ছে না ।
মাছ ঘাটের ইলিশ আড়তদার উত্তম বাবু জানান, গত কয়েকদিনের আমদানিতে ইলিশের দামও কমে গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ খুচরা বাজারে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, এক কেজির বেশি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ছোট ইলিশ ৩ শ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
জেলেদের সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রধান মৌসুম শেষ হয়েছে বেশ আগেই। প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসুম। এরপর নদীর পানি কমে যায়। ফলে উজানের স্রোত না থাকায় নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়ে খুবই কম। কিন্তু এবার এটা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ।
অসময়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তবে এটাকে তারা আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে মৎস্য অধিদপ্তর ও গবেষকরা এমন ঘটনাকে ইলিশের ‘সেকেন্ড সিজন’ হিসেবে ধারণা করছেন।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া জানান, জানুয়ারি মাসকে ইলিশের জন্য অসময় হিসেবে ধরা হয়। অথচ এ সময়েও এবার চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। যে কারণে চাঁদপুরের বড় মাছ ঘাট এখন ইলিশে ভরপুর।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার জানান, গত ৮ থেকে ১০ দিন এটা ন্যাচারাল ইলিশ পাওয়া নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু এলাকার জেলেরা ভরপুর মাছ পাচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, প্রজনন সময়ে জাটকা, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম এবং সমূদ্রে ৬৫ দিনের অভিযানের কারণে ইলিশের পজিটিভ ইমপেক্ট হচ্ছে। জাটকা ইলিশের উপর এবং অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধে আমাদের অব্যাহত অভিযান চলছে। শহরের ওয়্যারলেস এবং মাছ ঘাটে অভিযান করে বেশ পরিমাণ জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চাঁদপুর ইলিশ মোকামে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে যা অস্বাভাবিক।
মোকামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বরিশালের নদ-নদীতে অসময়ে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়ছে। এর আকারও বেশ ভালো। শীত মৌসুমেও পূর্ণিমার এই জো’তে ইলিশের দেখা মেলায় ব্যবসায়ী ও জেলেদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি দেশের মৎস্যখাতের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ বলেও মনে করেন তারা।
তবে শঙ্কার কথাও বলছেন অনেকে। অসময়ে নিধন হওয়া ইলিশের সিংহভাগই কিশোর বা জাটকা ইলিশ। এ বছর ইলিশ মৌসুমে ভরপুর ইলিশের দেখা নাও মিলতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন তারা।