দীর্ঘদিন পর আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে। রানওয়ে সম্প্রসারণ থেকে গ্রাউন্ড স্টেশন আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে বিমানবন্দরটি। ইতিমধ্যে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ধীরে ধীরে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিকমানে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। অভ্যন্তরীণ এই রুটের যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা থাকছে এই আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। করোনার কারণে কাজ কিছুদিন থমকে গেলেও আবারও কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে তা শেষ করতে চায় মন্ত্রণালয়। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে একটির বেশি উড়োজাহাজ একই সঙ্গে রানওয়েতে নামতে বা উঠতে পারে না। তবে বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পটি শেষ হলে একই সঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ দাঁড়াতে পারবে। কারণ কার্গো বিমান ওঠানামাসহ একসঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ পার্কিং করার ব্যবস্থা রেখেই এবার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের। এর আওতায় বর্তমানে শাহ মখদুম বিমানবন্দরে থাকা ৬ হাজার ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে বাড়িয়ে ১০ হাজার ফুট করা হচ্ছে। এর প্রস্থ তখন ১০০ ফুট থেকে বেড়ে হবে ১৫০ ফুট। আর এখনকার ২৬০ বাই ২৫০ বর্গফুটের অ্যাপ্রোন হবে ২৭৫ বাই ২৫০ বর্গফুট। নির্মিতব্য আধুনিক টার্মিনাল ভবনটির নিচতলার আয়তন হবে ১৭ হাজার বর্গফুট। দ্বিতীয় তলাটি হবে ১১ হাজার বর্গফুটের। টাওয়ার ও অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে টার্মিনাল ভবনটিতে জায়গা থাকবে ৩১ হাজার বর্গফুট। সুপরিসর টার্মিনাল ভবনে চেক-ইন কাউন্টারের সংখ্যা এখনকার তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে। সঙ্গে থাকবে বিশালাকৃতির কনকার্স হল, ডিপারচার লাউঞ্জ, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ¯œ্যাকস কর্নার ও একটি ভিআইপি লাউঞ্জ। গত বছর ৪ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন রাজশাহী বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। পরিদর্শনে এসে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, দেশের অন্যতম এই বিমানবন্দরটিকে শিগগিরই ঢেলে সাজানো হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্গো উড়োজাহাজ কেনার অনুমোদন দিয়েছেন। শিগগিরই পণ্যবাহী উড়োজাহাজগুলোও দেশে আসবে। আর শাহ মখদুম বিমানবন্দর আধুনিকায়নের পর এখান থেকেও কার্গো বিমান পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ২০২২ সালের জুন নাগাদ ২ বছর মেয়াদি এই আধুনিকায়ন কাজ শেষ হবে বলেও আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রতিনিয়ত যাত্রীসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাও তাদের ফ্লাইটসংখ্যা বাড়াচ্ছে। ৩৬ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি দুটি সংস্থা মিলিয়ে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট যাত্রী পরিবহন করছে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হওয়ায় শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের তিনটি এয়ারলাইনস। প্রতিটি এয়ারলাইনসের দুটি করে মোট ছয়টি ফ্লাইট প্রতিদিন চলাচল করছে। ফলে এ রুটে সপ্তাহে মোট ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ যাত্রীর অভাবে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে আবারও রাজশাহী-রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভীন জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে গিয়ে দাঁড়াবে। তখন যাত্রীরা আরও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।