ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। সেইসাথে আরও ৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্ট অ্যান্ড ডিসিপ্লিন থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে আরও ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।ডিসিপ্লিনের সদস্যসচিব অধ্যাপক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়৷ অধ্যাপক মিজান নিজেও সাংবাদিকদের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন৷
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পর পর জড়িতদের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্ররা। আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বুয়েট শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানায় বুয়েটের শিক্ষক সমিতি। তাদের মূল দাবি ছিলো অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। এবং জানান দোষীদের অবশ্যই বহিষ্কার ও শাস্তি প্রদান করা হবে। তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া ফলে কিছুদিন সময় লাগবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যার সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস প্রদান করলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন থামিয়ে রাখে। তিনি মামলাটি দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করে। গত ১৩ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চার্জশিটে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটনায় ২৬ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কারের ফলে ছাত্রদের দাবি আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ছাত্ররা। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়েছেন তারা।
আজীবন বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন— মেহেদী হাসান রবিন, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম (জিয়ন), মো. মুজাহিদুর রহমান, মেহেদী হাসান রাসেল, এহতেশামুল রাব্বী (তানিম), খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম (তানভীর), মুনতাসির আল জেমি, এএসএম নাজমুস সাদাত, মো. শামীম বিল্লাহ, মোর্শেদ আমর্ত্য ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মুজতবা রাফিদ, মো. মিজানুর রহমান, মো. আশিকুল ইসলাম, এস এম মাহমুদ, ইশতিয়াক আহমেদ (মুন্না), অমিত সাহা, মো. মাজেদুর রহমান, মো. শামসুল আরেফিন, মোয়াজ আবু হোরায়রা, মো. আকাশ হোসেন, মো. মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ও মুহতাসিম ফুয়াদ।
এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন—আবু নওশাদ সাকিব, মো. সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ গালিব, মো. শাওন মিয়া, সাখাওয়াত ইকবাল অভি ও ইসমাইল।