নিজস্ব প্রতিবেদক:
৫৬ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নাটোর চিনিকলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই শুরুর ৩৭ দিন পর আখের অভাবে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে গেছে। মিলে আখ দিলে টাকা পেতে দেরী হওয়া এবং মূল্য কমের কারণ দেখিয়ে আখ চাষীরা তাদের আখ গুড় তৈরীর মাড়াইকলে নগদ মূল্যে বিক্রি করে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে নাটোর চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হতেই বন্ধ হয়ে গেছে চিনিকলটির আখ মাড়াই কার্যক্রম।
নাটোরের বড় বড় কলকারখানার মধ্যে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর চিনিকল অন্যতম। নাটোর শহরতলীর হুগোলবাড়ীয়া এলাকায় অবস্থিত নাটোর চিনিকল। আগামী ২ ডিসেম্বর মিলটিতে এবারের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়। আখ সংকট ও চিনি উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এই চিনিকল প্রায় প্রতিবছরই লোকসানের মুখে পড়ে। এই চিনিকলে ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে শতকরা ৬.২ রিকোভারী ধরে ৫৪ কর্মদিসে ৪ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আগে যেখানে প্রতি মন আখের মূল্য ছিল ১৪০ টাকা । এবার ৪০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রতিমন ১৮০ টাকা নির্ধরণ করা হয়। কিন্তু এর পরেও আখচাষীরা তাদের আখ চিনিকলে সরবরাহ না করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে পাওয়ার ক্রাশার মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে তাদের আখ বিক্রি করে দেয়। ফলে মাত্র ৩৭ দিন চলার পর গত কাল থেকে মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শদিুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, আয়নাল হক, নাসির উদ্দিনসহ আখ চাষীরা জানান, মিলে আখ দিলে লেবার খরচ, গাড়িভাড়া বাদ দিয়ে এক বিঘা জমির আখ বিক্রি করে পাওয়া যায় ৩০ হাজার টাকা। সে টাকা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। আবার পূর্জি পেতেও দেরী হয়। ফলে অন্য আবাদ করা যায়না। অনেকে আবার মিলের অনেক কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করেন। সেখানে গুড় তৈরীর মাড়াই কলে আখ দিলে এক বিঘা জমির আখ বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। কোন লেবার খরচ ও গাড়ি ভাড়া লাগে না এবং নগদ মূল্য পাওয়া যায়। আখ কেটে অন্য আবাদ করা যায়। আখের মূল্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী পাওয়া যায়। সে কারণেই তারা মিলে আখ সরবরাহ করেননি।
মিলের মৌসুমী শ্রমিক দবির উদ্দিনসহ শ্রমিকরা জানান, আখচাষীরা মিলে আখ সরবরাহ না করায় মাত্র ৩৭ দিন চলার পর মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি ঠিকমত আখ সরবরাহ করা হত তালে মিল ৩/৪ মাস চলতো। এখন মিল বন্ধ হওয়ায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাবেন।
নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া জানান, ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে শতকরা ৬.২ রিকোভারী ধরে ৪৯৩৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত দুই ডিসেম্বর চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হয়। এবার আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার একর। সরকার আখের মূল্য শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করায় আগে যেখানে প্রতি মন আখের মূল্য ছিল ১৪০ টাকা । এবার ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে করে প্রতিমন ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবার জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের ফলে নাটোর চিনিকল এলাকায় গুড় তৈরীর আখ মাড়াই কল জিরো পর্যায়ে রাখা গেলেও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও রাজশাহী সুগার মিল এলাকায় অনেক গুড় তৈরীর পাওয়ার ক্রাশার চালু ছিল। ফলে আখচাষীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দামে তাদের আখ পাওয়ার ক্রাশার মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে আখ সরবরাহ না করায় মাত্র ৩৭ দিনে ৫০ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হতেই মিল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।