ডেস্ক নিউজ
সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়লেও বাংলাদেশে তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী।
বুধবার সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ আমাদের ঘাড়ে আছে। এগুলো শোধ করতে হবে।’
দেশের প্রধান তিনটি খাত- রেমিটেন্স, পোশাক আর কৃষির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই তিনটি খাত শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা থাকবে কি না? রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে দেশটি কোনোদিনই কোনো সময়ই ঋণ পরিশোধে ডিফল্ডার হয় না, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। আমরা অত্যন্ত সতর্ক। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।’
পাঁচ দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কা টানা দ্বিতীয়বার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তাদের বিদেশে ঋণ পরিশোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে, এমনকি কাগজের অভাবে স্কুলে পরীক্ষা বাতিল হয়েছে।
দেশটির এই দশার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিরও একই পরিণতি হয় কি না, এ নিয়ে বলাবলি হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
যদিও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনটি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, শ্রীলঙ্কা যেসব ভুল করেছে বা তাদের অর্থনীতি যেসব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেসব ভুল নেই। এখানকার অর্থনীতির ভিত্তিও ভিন্ন।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবিও তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করে বলেছে যে, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার পরিণতি হওয়ার কোনো কারণই নেই।
শ্রীলঙ্কা যেসব কারণে বিপর্যয়ে পড়েছে, তার একটি কারণও বাংলাদেশের নেই। দেশটির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে করোনার কারণে পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়া। দেশটির জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আয় হতো এই খাত থেকেই। দুই বছর ধরেই প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে তা।
এ ছাড়া করোনার সময় রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স কমে গেছে। অর্গানিক কৃষি চালু করতে গিয়ে উৎপাদন কমে গেছে।
এর মধ্যেও নানা মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছে রিজার্ভ। এটি নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে। চলতি বছর যে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও নেই দেশটির।
সে দেশে মেগাপ্রকল্পগুলোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উছেছে।
বাংলাদেশেও গত এক যুগে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্প খুবই দরকারি।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তো উন্নয়নটা কার জন্য? মেট্রোরেল কার জন্য? মেট্রোরেল এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ যাতে সরাসরি চলাচল করতে পারে তার জন্য। এখন হয়ত আপাতত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু মেট্রোরেল হয়ে যাবার পর উত্তরা থেকে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যায়, অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার লোক যাতায়াত করতে পারবে। তখন গাড়ি নেওয়া লাগবে না। সাধারণ মানুষের জন্য আরও বাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
জি এম কাদের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলেন। এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একে তো করোনার ধাক্কা আর একটা হচ্ছে যুদ্ধের ধাক্কা। কিন্তু এই ধাক্কার মধ্যেও আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, গড়ে ৬ দশমিক ৩ ভাগ। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলারে।
‘জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু বেড়েছে, এটা ঠিক। দারিদ্রসীমা হ্রাস পেয়েছে। এখন সেনশাস রিপোর্ট যদি বের হয় দেখা যাবে দারিদ্রসীমা বাড়েনি, সেটা বরং কমেছে।
‘তবে হ্যাঁ, মধ্যবিত্ত বা যারা কিছু কাজ করত, করোনার কারণে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছিল, আমরা বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের সচল রাখার ব্যবস্থা করেছি যেন এক ধাক্কায় মানুষ কষ্ট না পায়।’
যানজটকে মানুষের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ার একটি অনুষঙ্গ হিসেবেই দেখছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে অনীহা নিয়েও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। অতিরিক্ত গাড়ি এখন রাস্তায় চলে। সবাই যদি একটু ট্রাফিক রুলস মেনে চলে আর গাড়িটা যদি কম বের করে তাহলে আর জ্যাম হয় না।
‘একটা ফ্যামিলির একটার জায়গায় যদি ২-৩ টা গাড়িতে চড়ে আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন-এরকম করলে তো চলবে না। গাড়িতে চড়বেন না, ট্রাফিক জ্যাম হবে না; এটা হলো বাস্তবতা।’
গ্যাসের সংকট নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন গ্যাসের ছয়টা কূপে বালু দেখা দিয়েছে। তারপর ঠিকঠাক করে সেটা কোনো রকমে চালু রাখা হয়েছে, গ্যাস তোলা বন্ধ হয়নি। অন্য সময় হলে এটা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেত।
‘চারটা কূপ সংস্কার করা হয়েছে, দুইটা বাকি আছে, সেটাও হয়ে যাবে। এই সমস্যাটা থাকবে না।’