ডেস্ক নিউজ
করোনাকালে প্রচলিত কাজের বাইরে মানবিক ও ব্যতিক্রমী কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছে পুলিশ। শুরুর দিকে যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজনরা মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে অংশ নিতেও ভীত ছিলেন, সেখানে পুলিশ সদস্যরা হাজির হয়েছেন। লাশ দাফনে অংশ নেন তারা। মাঠে-ময়দানে ঘুরে চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করেন। তাই শুরুতে পুলিশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল বেশি। অনেকেই বলছেন, করোনাকালে ভিন্ন এক পুলিশ বাহিনী দেখা গেছে।
টিকার যুগে বাংলাদেশ প্রবেশের পর সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতিষেধকটি দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার টিকা নেওয়ার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) একটি সভা করে। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কনস্টেবল থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য পদবির পুলিশ সদস্যদের মাঝে টিকা নিয়ে ভীতি, বিভ্রান্তি বা অনাস্থা নিরসনে বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাই সবার আগে টিকা নিতে চান। ডিএমপি কমিশনার ও কয়েকজন অতিরিক্ত কমিশনার শুরুতেই টিকা গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের টিকা দিতে আমরা কয়েক ধরনের তালিকা করেছি। বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের আলাদা তালিকা করা হয়েছে। যারা আগ্রহী, অবশ্যই তারা আগে টিকা পাবেন। বাহিনীর মধ্যে যাতে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া না হয় সে জন্য আমরা যারা সিনিয়র, তারা শুরুতে টিকা নিতে চাই। আমি বলেছি, ডিএমপির মধ্যে আমি সবার আগে নিতে ইচ্ছুক। আমরা চাই, টিকা ঘিরে যাতে কোনো গুজব ও বিভ্রান্তি না থাকে।’
পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত বাহিনীর ১৮ হাজার ৮৯৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ১৬ হাজার ৪৮২ জন ও র্যাব দুই হাজার ৫১৭ জন। ডিএমপিতে করোনা আক্রান্ত সদস্য তিন হাজার ২০২ জন। বর্তমানে পুলিশের ৬৫ জন কোয়ারেন্টাইন ও ৭২ জন আইসোলেশনে আছেন। পুলিশের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৮১৮ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৫ সদস্য। তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৭৯ ও র্যাব ছয়জন।
জানা গেছে, করোনার টিকা নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল ডিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় বেশ কিছু বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিকা নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যেসব আইডি থেকে টিকাকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ এ ব্যাপারে আরও তৎপর থাকবে। গতকালের ওই সভায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে টিকা নিতে আগ্রহী সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় সোয়া দুই লাখ পুলিশ সদস্যের কাছে ইউনিট প্রধানের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৮-১০টি বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতি বুথে চারজন পুরুষ ও দু’জন নারী নার্স থাকবেন। দুই বুথ মিলে চিকিৎসক থাকবেন একজন। প্রতি দুই বুথের জন্য একটি ফ্রিজ থাকবে। সেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ করা হবে। টিকা গ্রহণের পর উপসর্গ পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মেনে চিকিৎসকদের টিম পুলিশ সদস্যদের পর্যবেক্ষণ করবে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদস্যরা টিকা নেওয়া শুরু করলে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে। যারা এখনও টিকা নিতে দ্বন্দ্বে রয়েছেন, তারা আগ্রহী হয়ে উঠবেন।