ডেস্ক নিউজ
পরিচালন নির্দেশিকা জারির পর সরকার এবার ই-কমার্স খাতের জন্য নতুন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণহীন এ খাতে কঠোর শৃঙ্খলা আনতে চায় সরকার।
আইনটির নাম হতে পারে ‘ডিজিটাল ই-কমার্স অ্যাক্ট’। এ ব্যাপারে যৌথ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার এক জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন চার মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে অন্যদের মধ্যে অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ। এ ছাড়া বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিকেল ৩টায় এ বৈঠক বসবে।
বর্তমানে ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু বিকাশে ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ নামে শুধু একটি নীতিমালা রয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পর তা হালনাগাদ করতে ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০২১ এর খসড়া তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সাময়িক সমস্যা মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যে ডিজিটাল ই-কমার্স খাতের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জারি হয়েছে, যা সময় সময় পরিবর্তন ও সংশোধনযোগ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতে ব্যবসায় কিছুটা শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হলেও যারা প্রতারণা করবে তাদের কী শাস্তি দেয়া হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতের কর্তৃপক্ষ কে হবে, কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বা এখতিয়ার কতটুকু থাকবে, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক কী কী ব্যবস্থা নিতে পারবে– এগুলো কোথাও বলা নেই।
দেশে ডিজিটাল ই-কমার্স খাতের যত সম্প্রসারণ ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণা। যেখানে একের পর এক আসছে বিতর্কিত মডেলের ব্যবসা। দেয়া হচ্ছে নিয়মবহির্ভূত ডিসকাউন্ট অফার।
এর বিপরীতে তদারকি জোরদার না হওয়া এবং আইনি কাঠামোর দুর্বলতার সুযোগেও দেশে কিছু পঞ্জি মডেলের অসৎ উদ্যোক্তার জন্ম হয়েছে। তারা গ্রাহকের কাছে ব্যাপক ডিসকাউন্ট অফারের টোপ ফেলছে। ক্রেতারা তা লুফে নিতে দলে দলে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত লেনদেন করছেন। ওই টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে আগাম।
কিন্তু পঞ্জি উদ্যোক্তা আগাম টাকা নিয়েও সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। একইভাবে ঠকানো হচ্ছে পঞ্জি উদ্যোক্তার ব্যবসায় পণ্য দিয়ে সহায়তাকারী মার্চেন্ট বা সেলারদেরও।
ব্যাপক ডিসকাউন্টের ফাঁদে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ৬ লাখ লোকের ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা খোয়া গেছে, যেখানে গ্রাহক বা ক্রেতা রয়েছেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ। আর সরবরাহকারী রয়েছেন দুই থেকে আড়াই লাখ।
মূলত ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও একই ধরনের অভিযোগ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও উঠতে শুরু করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতটির ওপর গ্রাহকের হারানো আস্থা ফেরাতে আইন তৈরির সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
দেশের অনেক খাত ও ব্যবসার জন্য আলাদা আলাদা নীতিমালা, বিধিবিধান ও আইন রয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু ডিজিটাল ই-কমার্সের ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ক্রমর্ধমান ডিজিটাল ই-কমার্স খাতে সাম্প্রতিক সময়ে বহু অভিযোগ উঠছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগও এখন স্পষ্ট। এ ধরনের প্রবণতা ঠেকাতে একটি আলাদা আইন হওয়া দরকার। সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।’
ডিজিটাল ই-কমার্স সেল প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠ বিকাশে প্রণীত নীতিমালা যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইতিমধ্যে ডিজিটাল ই-কমার্স খাত পরিচালন নির্দেশিকা (এসওপি) জারি হয়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান খাতটির অবাধ বিকাশ ও সম্ভাবনার সুফল পেতে হয়ত আমাদেরকে আইন তৈরির দিকেও যেতে হবে।’