ডেস্ক নিউজ
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিধি-নিষেধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তার জন্য সারা দেশে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২২ হাজার ৮৩০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল রবিবার এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কভিড-১৯ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা দিতে দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পাঁচ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন কোটি এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের সহায়তা দিতে দেশের ৬৪ জেলার ৩২৮টি পৌরসভার অনুকূলে মোট তিন হাজার ২৮০ টন চাল এবং মোট তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দের শর্তানুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া চাল ও নগদ টাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকসহ কর্মহীন ও দুস্থ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করতে হবে। ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের বরাদ্দ থেকে খাদ্য সহায়তা (চাল, ডাল, লবণ, তেল, আলু ইত্যাদি) দিতে হবে।
আরেকটি চিঠিতে কভিড-১৯, বন্যা, নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪ জেলার প্রশাসকদের অনুকূলে মোট ১৪ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং এক কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আলাদা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সরকার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) আওতায় এক কোটির বেশি অতিদরিদ্র ও অসহায় দুস্থ পরিবারকে বিনা মূল্যে ১০ কেজি হারে চাল দেবে। এ লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চাল বরাদ্দ দিয়ে গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি এবং ৩২৮টি পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৮টিসহ মোট এক কোটি ১৭ হাজার ৫৫১টি কার্ডের বিপরীতে ১০ কেজি হারে এক লাখ ১৭৬.৫১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকরা ভিজিএফ বরাদ্দের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যকে অবহিত করবেন।
বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, ভিজিএফ উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আদমশুমারি ২০১১-এর জনসংখ্যা অনুযায়ী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক বরাদ্দ করা ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা পুনর্বিভাজন করে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দুস্থ ও অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে এ সহায়তা দিতে হবে। তবে সাম্প্রতিক বন্যাক্রান্ত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১২টি শর্ত দিয়ে এর চারটি পূরণ করে এমন ব্যক্তি বা পরিবারকে দুস্থ বলে গণ্য করে সহায়তা দিতে হবে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে যাদের ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনো জমি নেই, যে পরিবার দিনমজুরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, যে পরিবার মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল, যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণবয়স্ক কোনো পুরুষ সদস্য নেই, যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়, যে পরিবারে উপার্জনশীল কোনো সম্পদ নেই, যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্তা, যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল ও অক্ষম প্রতিবন্ধী, যে পরিবার কোনো ক্ষুদ্রঋণ পায়নি, যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য বা অর্থসংকটে পড়েছে এবং যে পরিবারের সদস্যরা বছরের বেশির ভাগ সময় দু-বেলা খাবার পায় না।
ইউনিয়ন/পৌরসভা ভিজিএফ কমিটির প্রকাশ্য সভায় এই তালিকা প্রণীত এবং প্রত্যায়িত হতে হবে। তালিকা এমনভাবে করতে হবে যে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ না পায়। বরাদ্দ করা চাল শর্ত মেনে আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে বলে বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়।