ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তৃণমূলের জনগণের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাচ্ছে তার জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ আমরা পাব। আমি ব্যবসায়ীদেরও বলব, আপনারাও সেভাবে প্রস্তুতি নেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে ১৬ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ‘বিজয়ের ৫০ বছর-লাল সবুজের মহোৎসব’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে অনুষ্ঠানস্থল রাজধানীর হাতির ঝিল এম্ফিথিয়েটারে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি এবং দেশকে আরও বেশি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ আমরা পাব। এটা হয়তো উন্নয়নশীল দেশ হতে না পারলে আমরা পেতাম না। সেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। আর আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় রয়েছে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পিছিয়ে থাকিনি।
তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদেরও বলব, আপনারাও সেভাবে প্রস্তুতি নেবেন। মনে রাখবেন এই দেশ এবং এই মাটি আপনাদের সুযোগ দিয়েছে। জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলে আজকে ব্যবসায়ী, না হলে কোন সুযোগই বাঙালির জীবনে ছিল না। আমরা তখন শোষণ, বঞ্চনার শিকার হয়েছি। কাজেই সবাই এই বাংলাদেশ উন্নত করবার জন্য এবং বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাবেন।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কাউন্সিলরগণ,ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং আমন্ত্রিত বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী পর্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর একটি ভিডিও চিত্র এবং পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এটি পরে টেলিভিশনে উপভোগ করবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সহযোগিতায় সকলের জন্য উন্মুক্ত এই আয়োজন হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটারে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে এবং ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে দেশকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার প্রয়াসে সকল বয়সী লোকদের জন্য বিনোদন হিসেবে থাকবে গান, নাচ সহ নানা রকম সাংস্কৃতিক আয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বেসরকারি খাতকে যেমন সুযোগ দেয় তেমনি আমাদের দেশের তৃণমূলে যে মানুষগুলো পড়ে আছে তাদের উন্নয়নের জন্যও ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি ব্যবসায়ীদের বলব প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার জনগণের আর্থিক উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ততই প্রসার ঘটবে, তেমনি আপনাদের কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য বাজারও সৃষ্টি হবে। এতে মানুষের ভাগ্য যেমন পরিবর্তন হবে আপনাদেরও আয় বৃদ্ধি পাবে’।
প্রধানমন্ত্রী এসব বিবেচনায় রেখে এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এফবিসিসিআই ও তাঁর উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান এবং পাশাপাশি বিজয়ের মাসব্যাপী ডিএনসিসি’র প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মেয়র আতিকুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।
‘আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি, কিন্তু তাঁর সরকার ব্যবসা বান্ধব’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটানো এবং দেশের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে যেন তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে সেটাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে একে উন্মুক্ত করার পাশাপাশি বেসরকারি শিল্পায়নের উদ্যোগ এবং নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল তৈরির প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পাশাপাশি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন শুরু করে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই সকলের সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়ালি তিনি সংযোগ স্থাপন করতে এবং অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরেছেন। যা এক সময় অনেকের কল্পনার অতীত ছিল।
সরকার প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশকে ডিজিটালাইজড করার ফলেই ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে, ক্রয়-বিক্রয় এবং মানুষের নানা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড এমনকি কৃষক তাঁর ফসলে কি ধরনের সার প্রয়োগ করবে সেই তথ্যও অনলাইনে পাচ্ছে।
তিনি বলেন, এভাবেই আমরা তথ্য প্রযুক্তিকে গণমানুষের কর্মসংস্থান এবং তাঁর সেবায় নিয়োজিত করতে পেরেছি। আর এভাবেই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি এ সময় তাঁর সরকারকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি।
দারিদ্র্যের হার তাঁর সরকার ৪০ শতাংশের ওপর থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব না ঘটলে হয়তো এটা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। তাঁর সরকারের দেশ পরিচালনায় এর আগে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে উঠেছিল উল্লেখ করে করোনার বিশ^মন্দা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ ভাগ বাংলাদেশেরই অর্জিত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সামনে রেখে প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিয়েছি। যাতে করে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে পারে।
’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালির বিজয়ের গৌরবময় ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই সে ইতিহাসকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিজয়ের মাসে বিজয়ের উৎসব করতে পারি, মুক্তিযোদ্ধারা মাথা উঁচু করে বলতে পারে যে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলতে পারে, আমি শহীদ পরিবারের সন্তান।
তিনি বলেন, আমরা চাই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে এবং জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন সেই আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।