ডেস্ক নিউজ
পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও নালা নর্দমা সংস্কারসহ উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। তবে নানা কারণে এই সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের গতি ছিল মন্তর। দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর বর্ষায় ঝিমিয়ে পড়া উন্নয়ন কাজের গতি বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের মতে এটি অবশ্যই পর্যটনের জন্য সুখবর।
এদিকে চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। হেমন্ত ঋতু দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এক সপ্তাহ পরই শুরু হচ্ছে হেমন্ত। ইতোমধ্যে বর্ষা শেষে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখন কক্সবাজার আসতে শুরু করেছে। আবার কক্সবাজার পর্যটকে মুখর হয়ে উঠছে। সৈকতে বাড়ছে দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদচারণা।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্টসহ পর্যটকবান্ধব ব্যবসাগুলো এখন সচল। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে লাখ লাখ পর্যটকের ঢল নামে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে। এসময় পর্যটনবান্ধব ব্যবসা বাণিজ্যসহ সচল থাকে কক্সবাজারের অর্থনীতি।
তবে গত দেড় বছর করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে পর্যটক আসতে না পারায় কক্সবাজারের পর্যটকবান্ধব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পর্যটকরা কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে শুরু করেছেন।
বিশেষ করে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের স্রোত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় এবার পর্যটন মৌসুমে আগের মতই পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার। পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্য্যুরস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এবার পর্যটন মৌসুমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সৈকত এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে।
কক্সবাজার শহর এবং পর্যটন এলাকার কলাতলীতে চলমান উন্নয়ন কাজে রাস্তাঘাটের যে করুণ দশা এতে পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগের চিত্র প্রধান সড়কসহ গোটা শহরেই। আর বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। কোথাও কোথাও পানি জমে কোমর সমান। তখন যানবাহন ও লোকজনের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় গত অর্থবছর থেকে কক্সবাজার শহরে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে লিংক রোড থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় প্রায় ৯ কিলোমিটার চার লেনের দৃষ্টিনন্দন সড়কের কাজ শেষ হওয়ার পথে।
কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরীণ ৩২টি সড়ক উপ-সড়কের ৫২ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এবারকার পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও সৈকত এলাকা এবং হোটেল মোটেল জোনের সড়কগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে।
ফাইভস্টার হোটেল সিগাল-এর সিইও ইমরুল হাসান রুমী বলেন, বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারকে ঘিরেই গড় উঠেছে ফাইভস্টার হোটেল সীগালসহ আরো তারাকা হোটেল। কিন্তু পর্যটন শহরের সড়ক উপসড়কের যে অবস্থা তাতে পর্যটকরা বিরক্ত। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক উন্নয়ন কাজে মন্তর গতি থাকলেও সম্প্রতি সীগালের সামনে পৌরসভা সড়ক উন্নয়ন কাজের গতি বৃদ্ধি করেছে। এটি অবশ্যই পর্যটনের জন্য ভালো খবর।
এদিকে কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমটিার প্রধান সড়কে ২৫৮ কোটি টাকার কাজ চলছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সড়কটি যানবাহন চলাচল উপযোগী করার কথা বলেছেন।
গতকাল সরেজমিনে কক্সবাজার শহর ও সৈকত সংলগ্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, সড়ক উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলার চিত্র। গত সপ্তাহে দৈনিক ইনকিলাবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেখা গেছে, লাবনী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে সীইন পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজে গতি বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হোটেল সীগাল সংলগ্ন সড়কে উন্নয়ন কাজ করতে দেখা গেছে। একইভাবে কাজের গতি বেড়েছে কক্সবাজারের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় প্রধান সড়কেও।