নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার একটি বেসরকারী হাসপাতাল “মদিনা চক্ষু হাসপাতালে” চোখের অপারেশন করার পর এক ভিক্ষুক সহ দুইজনের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছে ভক্তেভোগী ও স্বজনদের। এরপর ভুক্তোভোগিরা হাসপাতালে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে ঘটনাটি জানার পর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়। এর প্রায় এক ঘন্টা পর সিভিল সার্জন পুনরায় হাসপাতালটি চালুর আদেশ দেন। এ ঘটনায় হাসপাতালে থাকা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবে অপেরশন কারী চিকিৎসক ও হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ আরিফ উর রহমান এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।
অভিযোগে জানা যায় নাটোর সদর উপজেলার চকবৈদ্যনাথ এলাকায় প্রায় দুই বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় মদিনা চক্ষু হাসপাতাল ও ফ্যাকো সেন্টার। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিজেই একজন রেটিনা বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন। স¤প্রতি মদিনা চক্ষু হাসপাতালের ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প করা হয়। সেখানে অনেক রোগী চিকৎিসা নেয়। চোখে কম দেখা ও সমস্যার কারনে সদর উপজেলার সিদ্দির গ্রামের সাদিমোন বেওয়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার দিয়ার কাজিপুর গ্রামের খাদিজা নামে দুই রোগী ভর্তি হন। গত ১৭ এপ্রিল হাসপালটিতে তাদের চোখের অপরেশন করার পর তারা আর চোখে দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগি ভিক্ষুক সাদিমোন বেওয়া বলেন, চোখে কম দেখার কারনে ফ্রি চক্ষু অপারেশনের কথা শুনে তিনি হাসপাতালে যান । পরে তার অপারেশন করার জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয় হাসপাতালে। কিন্তু অপারেশনের পর তিনি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। তার স্বামী সন্তান কেউ নেই। মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তে খান। চোখের যেটুকু দৃষ্টি ছিল এখন তাও নেই। তিনি কার কাছে যাবেন ? কে তাকে দেখবে।
একই দিনে নলডাঙ্গা উপজেলার দিয়ার কাজিপুর গ্রামের খাদিজারও চোখের অপারেশন করা হয় এই হাসপাতালটিতে। তিনিও দৃষ্টিহীন হয়ে গেছেন। খাদিজার নাতি রিয়া বলেন, চক্ষু ক্যাম্প করার কথা শুনে রোগী আনা হয় এখানে। তার দাদিরও এই হাসপাতালের অপারেশন করেন ডাক্তার আরিফ উর রহমান। ৭দিন পর চোখে দেখতে পাবে বলে তারা দাবি করলেও এখন তার দাদি কিছু দেখতে পান না।
ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বলেন, এই হাসপাতালে চোখের অপারেশন করা হয়। আর ফ্রি অপারেশনের কথা বলে ভিক্ষুকের কাছ থেকেও তারা টাকা নেয়। রোগীরা দৃষ্টিহীন হয়ে গেছেন কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ রোগীদের বিষয়টি প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেননি। তারা এর একটা সঠিক প্রতিকার দাবী করেন।
মদিনা চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকের সহযোগী অকটোমেটিকস রুমন আলী জানান, অপারেশন করা হয়েছে। আর এই অপারেশন করতে গিয়ে অনেক সময় রোগীরা তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলে। সেবিষয়ে তারা রোগী ও তাদের স্বজনকে জানিয়ে অনুমতি নিয়েই অপারেশন করেছেন। এছাড়াও এই বিষয় নিয়ে এখন কোন অভিযোগ করাও সঠিক নয়। চোখের অপারেশনের ক্ষত স্থান সম্পুর্ন ভাবে শুকিয়ে গেলে তারা আবার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, হাসপাতালে থাকা আরো অনেক অপারেশন করা রোগীর কথা চিন্তা করেই এবং ক্ষতিগ্রস্থ রোগীদের সাথে আলোচনা করেই হাসপাতাল খোলার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।