নিউজ ডেস্ক:
দেশের বিমানবন্দরগুলোতে অধিকতর নিরাপত্তার জন্য সব বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে পৃথিবীর অনেক দেশে ডগ স্কোয়াড ইউনিট আছে। অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ডগ স্কোয়াড ইউনিট প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
এ দিন শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ৮ হাজার ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১১ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারী অর্থ (জিওবি) প্রায় ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৫১ কোটি টাকা ও প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। একনেক সভা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুকুরের ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। পৃথিবীর অনেক দেশের বিমানবন্দরেই ডগ স্কোয়াড আছে। বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার জন্যেও ডগ স্কোয়াড গঠন করতে হবে। সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক ও ছয়টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। দেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিমানবন্দরগুলোর ব্যস্ততাও দিন দিন বাড়ছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় এসব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। কমিউনিকেশন ও নেভিগেশন সার্ভেইল্যান্স (সিএনএস) ব্যবস্থা উড়োজাহাজ পরিচালনা ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে বাংলাদেশে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলোর বেশিরভাগই পুরনো, অনেক সময় এসব ঠিকঠাক কাজ করে না। গৃহীত প্রকল্পের আওতায় এ কাজের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি কেনা হবে।
‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ অর্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। একনেক সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
বেশ কয়েকটি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর অন্যন্য নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন জানান, হাইওয়ে সড়ক নির্মাণের সময় চালকদের বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে পুনরায় তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশ হলো, সারাদেশের হাইওয়েগুলোতে এমন একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে, যাতে চালক-যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট দূরুত্ব অন্তর সার্ভিস সেন্টার থাকবে। এতে চালকদের জন্য গোসল, ঘুম, চালক পরিবর্তন ও যানবাহনের বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, সব বিশ্রামাগারেই পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা, বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, বাথরুম, চা-কফিসহ খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। এতে, চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হবে। ফলে, বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা কমবে ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
এছাড়া শুধু পৌরসভা এলাকায় নয়, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পানি সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য কত টাকা প্রয়োজন তারও হিসাব-নিকাশের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্যসীমা থেকে কোন কোন জেলা বের হয়ে আসতে পাড়লো- তার একটা ডাটাবেজ তৈরির বিষয়েও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সোলার বিদ্যুত ব্যবহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবহার উপযোগী প্রকল্পে সোলার বিদ্যুত ব্যবহার করতে হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, নেত্রকোনা-কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর খরচ ধরা হয়েছে ৭১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ইনভেস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট ফর ভালনেরেবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যেও মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিসিক শিল্প পার্ক, টাঙ্গাইল প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৬২ দশমিক ৮১ শতাংশ। ওই সময় খরচ হয়েছিল ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার একনেক বৈঠক শেষে চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত সংশোধিত এডিপির তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।