ডেস্ক নিউজ
মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও রুচির পরিবর্তনের কারণে গত এক-দেড় দশকে বাংলাদেশের বিস্কুট ও বেকারি পণ্যের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হয়েছে। বিস্কুট ও বেকারি শিল্পের অগ্রগতি চোখে পড়ছে খুব সহজেই। বাড়ির পাশের মুদির দোকানটিতে কিংবা অলিগলির চায়ের দোকানে দুই তিন টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিস্কুটের প্যাকেট। যেখানে থাকছে কয়েকটি বিস্কুট।
সাধারণ মানুষের তাত্ক্ষণিক চাহিদা মেটাচ্ছে দেশে তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত বিস্কুট। বিস্কুটের পাশাপাশি বেকারি পণ্যেও নিত্যনতুন চমক নিয়ে আসছে বিভিন্ন কোম্পানি। বলা যায়, ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধমে আকৃষ্টকরণের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। দিনে দিনে বড় হচ্ছে বিস্কুটের বাজার।
নতুন স্বাদ আর দামের বৈচিত্র্য দেশের বিস্কুটের বাজারকে প্রসারিত করছে। এ ক্ষেত্রে শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে গেছে প্যাকেটজাত বিস্কুট। রুচি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে। শুধু দেশেই নয়, বাংলাদেশি বিস্কুটের বাজার বাড়ছে বিদেশেও। এখানকার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করে এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্কুট রফতানি করছে।
উত্পাদন খরচ কম হওয়ায় তারা তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে রফতানি করতে পারছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিস্কুট এবং বেকারি শিল্পে দারুণ এক বিপ্লব ঘটে গেছে বলা যায়। এ খাতটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে ক্রমেই। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের বিস্কুটের বাজার সম্প্রসারিত হয়ে এখন তার আকার পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়েছে।
এটা প্রতি বছর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। বিস্কুট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর ভাষ্য হলো, গত কয়েক বছরে বিস্কুট তৈরির উপকরণগুলোর দাম কমেছে। এর পাশাপাশি কোম্পানিরগুলোর মধ্যে দারুণ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে অপেক্ষাকৃত উন্নত ও বিশ্বমানের বিস্কুট এবং বেকারি পণ্য সুলভমূল্যে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে।
যে কারণে অন্যসব পণ্যের তুলনায় বিস্কুটের দাম বাড়েনি তেমন, এতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী পছন্দ ও রুচির বিচিত্র স্বাদের বিস্কুট হাতের নাগালের মধ্যে পাচ্ছেন। এটা বিস্কুটের বাজার সম্প্রসারণের আরেকটি বড় কারণ। এখন বাংলাদেশের শহর-বন্দর গ্রামে মানুষের খাদ্যভ্যাস বদলাচ্ছে।
বিস্কুটকে এখন একটি পূর্ণাঙ্গ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এতে ক্যালসিয়াম, গ্লুকোজ, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট প্রভৃতি খাদ্য উপাদান যুক্ত করছে কোম্পানিগুলো। যা স্বাস্থ্যকরও বটে। মনোলোভা মোড়কে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, চিপস এবং অন্যান্য বেকারি পণ্য এখন মানুষ কম খরচে কিনতে পারছে।
সাধারণত বিস্কুটের বাজার তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এগুলো হলো, সাধারণ বেকারির তৈরি বিস্কুট, ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্র্যান্ডের বিস্কুট এবং প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির কারখানায় উত্পাদিত বিস্কুট। ব্র্যান্ডের বিস্কুটের দাম আগের চেয়ে কমে আসায় সেগুলোর বিক্রি এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
বিশেষ করে পাঁচ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিস্কুট এখন পাওয়া যায়, সেগুলো চায়ের দোকানে বেশ জনপ্রিয়। অলিম্পিক, হক, নাবিস্কো, ড্যানিশ, রোমানিয়া, প্রাণ, অলটাইম, কোকোলা, কিষোয়ান, ওয়েল ফুড প্রভৃতি এখন বিস্কুটের আকারে বাজারে এখন অতি পরিচিত ব্র্যান্ড।এখন সাধারণ বিস্কুট থেকে শুরু করে আলু, জিরা, ক্রিম, চকলেট, ওয়েফার, টোস্ট, মসলা, নোনতা, বাদাম, দুধ, ঘি, ঝাল, সবজি, গ্লুকোজ, কফি, স্ট্রবেরি, কমলা, আম, কলা ও আনারসসহ নানা স্বাদের বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে।পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিনি ছাড়া বিস্কুট ও হজমে উপকারী ডাইজেস্টিভ বিস্কুট এনেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি উন্নতমানের আমদানি বিকল্প বিস্কুট প্রস্তুত করে বাজারজাত করেছে, যা বড় বড় সুপারশপে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বৃহত্ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী বিস্কুট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চালুর মাধ্যমে বিস্কুটের বাজারে নাম লেখানোর পর থেকে এ ব্যবসার ধরনটাই পাল্টে গেছে।
এ খাতে তারা বেশ বড় অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। বিদেশের বাজারে বাংলাদেশে প্রস্তুত আন্তর্জাতিক মানের বিস্কুট রফতানি হচ্ছে। এটাও আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিস্কুট, ওয়েফার, ও কেক বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার আয় করেছে। আগের বছরের চেয়ে বিস্কুটের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি বিস্কুটের রফতানি চালান গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বিস্কুট শিল্প থেকে বর্তমানে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব পাচ্ছেন ভ্যাট হিসেবে।
যে কোনো শিল্পে দক্ষ শ্রমিক ও কারিগরের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে প্রায় পাঁচ হাজার বেকারি রয়েছে, যেখানে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। কিন্তু তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এখনো। মূলত বিভিন্ন বেকারিতে কিংবা বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তারা বিস্কুট ফ্যাক্টরিগুলোকে সচল রাখার জন্য ভূমিকা পালন করছেন। বিস্কুট শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলে উন্নতমানের রুচিকর বিস্কুট এবং বেকারি পণ্য উত্পাদনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে বিস্কুট শিল্পে সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগী প্রচেষ্টা এই ক্ষেত্রে বেশ কাজ দেবে।