বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ নারী সহকর্মী ঢাবি ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামী হয়েও একের পর এক উস্কানীমূলক তৎপরতা চালিয়েই যাচ্ছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীরা। নিজেরাই তদন্তের নামে সংগঠনের অপরাধীদের ‘নির্দোষ’ দাবি করার পর এবার আসামী নূর উল্টো ধর্ষণের শিকার ও অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে অনলম করা ছাত্রীকে ‘চরিত্রহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। সোমবার এক ভিডিও বার্তায় নূরের এ বক্তব্য প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
মাত্র একদিন আগেই নিজ সংগঠনের অপরাধীদের রক্ষা করতে তদন্তের নামে সাধারন ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে রিপোর্ট দেয়ায় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণ মামলার দু‘জন আসামী গ্রেফতারও হয়েছে। বাকীদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। তবে মামলার তিন সপ্তাহ চলে গেলেও অধিকাংশ আসামী এখনো প্রকাশ্যে। এমন অবস্থায় অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে চলা আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার উল্টো ধর্ষণ মামলা দায়ের করা সেই ছাত্রীকে ‘চরিত্রহীন’ বলে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে নুর।
যেখানে নূর বলেন, ‘ভিক্টিমের পরিচয় তো ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ঢাবির ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের না কি ছাত্রী। ফাতেমা আক্তার বিথি। তার ভাই মিথ্যা বললেন। তার ভাই বলেছিলো, নাজমুল হাসান সোহাগ তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করতো। তাদের সাথে বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপোক্ত হয়েছিলো। ’
ডাকসুর সাবেক ভিপি আরো বলেন, ‘নাজমুল সোহাগের সাথে যে একটা ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আপনারা দেখেছেন, লঞ্চের কেবিনে হাসিখুশিভাবে। যে লঞ্চের কেবিনে মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগটি এনেছিলো সেই লঞ্চের কেবিনে। একেবারেই হাস্যরসাত্মক। ছি, আমরা ধিক্কার জানাই। এতো নাটক যে করছে, যেই দুশ্চরিত্রাহীন। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায় একজন ছেলের সাথে বিছানায় গিয়ে, লঞ্চে হাসিখুশিভাবে।’
অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার ভুক্তভোগী ছাত্রীর পাশে দাড়ানো শিক্ষার্থীরা বলছেন, পদক্ষেপ না নেয়ায় নূর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার বিরোধী বিশেষ গোষ্ঠির হয়ে নূর এখন অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। অবিলম্বে নূরনহ সকল আসামীকে গ্রেফতার করে কঠো শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রীর পক্ষে নূরের বিরুদ্ধে মানহানীর নতুন মামলা দায়েও করার কথাও বলছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে আসা ধর্ষণের অভিযোগ ‘তদন্ত’ করে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে রবিবার প্রচার করে অভিযুক্ত সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। ‘নিজেদের’ তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদনের সারমর্ম সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করে ছাত্র পরিষদ দাবি করেছে, বিবাদীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তবে অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এই তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ধর্ষণের প্রমাণ আমি পুলিশের কাছেই দিয়েছি। তাদের কাছে কেন প্রমাণ দেব? তাদের এই প্রতিবেদন ভিত্তিহীন। ওরা তদন্তের নামে আমাকে, আমার পরিবারকে হয়রানী করেছে।’
এর আগে গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ, অপহরণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগে দুটি মামলা করেন। মামনের সঙ্গে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ আনেন ওই ছাত্রী। আর এতে সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করা হয় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ পরিষদের আরও তিন নেতাকে। অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করলেও মামলার পর ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে হাসানকে সরিয়ে দিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে সংগঠনটি।