সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী। আজ সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান এবং আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে সিলেট মহানগর হাকিম-২ আদালতে হাজির করা হলে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নেননি।
সিলেটের আইনজীবীরা বলছেন, এমন ঘৃণ্য অপরাধীদের পক্ষে আইনী লড়াইয়ে অংশ নেবেন না তারা। আইনজীবীরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত থেকেই আসামিদের পক্ষে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান জেলা আইনজীবী সভাপতি।
সোমবার দুপুরে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিকেলে আদালতে আনা হয় আরেক আসামি রবিউল ইসলামকে। আসামিদের সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক সাইফুর রহমান তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শুনানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ না নেওয়ায় আদালতে আসামিরা নিজেরাই নিজেদের পক্ষে সাফাই গান।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেওয়া একাধিক আইনজীবী জানান, আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত আসামিদের কাছে তাদের কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চান। এ সময় সাইফুর রহমান নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, রাজন, আইন উদ্দিন ও তারেক এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি জড়িত ছিলাম না।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, এই আসামিরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। সিলেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। তারা পুরো সিলেটকেই কলঙ্কিত করেছে। তাই সিলেটের আইনজীবীরা ব্যক্তিগতভাবে এমন আসামিদের পক্ষে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
”আইনজীবীরা চাইলে কারো পক্ষে যেমন লড়তে পারেন। আবার কারো পক্ষে না লড়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। এ সিদ্ধান্ত আইনজীবীদের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আইনজীবী সমিতি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ আইনী সুবিধা গ্রহণের অধিকার সকলের রয়েছে। আইনজীবী সমিতি এতে বাধা দিতে পারে না”, যোগ করেন তিনি।
রিমান্ড শুনানি শেষে এপিপি খোকন কুমার দত্ত বলেন, আমরা তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছিলাম। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলন না বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দুজন।
এ ঘটনায় তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)।