নিউজ ডেস্ক:
ওজন নিয়ে জটিলতার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তথা এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বাজার কানসাটে আম কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কাঁচা ও পাকা আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার আম ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১৫ জুন) কানসাট বাজারে সরজমিনে এই চিত্র ধরা পড়ে।
কানসাট বাজার থেকে আমের আড়তদাররা ৪৫-৪৬ কেজি হিসাবে আমের মণ কিনতে পারতেন। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করেই মণ প্রতি অতিরিক্ত ৫-৬ কেজি আম কেনা বন্ধের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। ৪০ কেজি মণ হিসাবেই আম কিনতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফরুক টিপু জানান, মৌসুমের শুরুতে কেবল কানসাট বাজারে জমে উঠতে শুরু করেছে আমের বাজার। এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে শিবগঞ্জ ও কানসাট এলাকায় ৪০ কেজি হিসাবে আমের মণ বেচাকেনার নির্দেশ জারি করা হয়।
অনেক ব্যবসায়ী বিষয়টি জানতে না পেরে শতশত মণ আম বাজারে নিয়ে আসেন। শনিবার সকালে প্রশাসনের এমন নির্দেশনা জানতে পেরে হতাশ হয়ে পড়েন। দিনভর অপেক্ষা করেও তারা আম বিক্রি করতে পারেননি।
ওমর ফরুক টিপু আরও জানান, আদিকাল হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কাঁচামাল বিশেষ করে আম ৪৫-৪৬ কেজিতে এক মন বিক্রি হয়। যা একরকম নিয়মেই পরিণত হয়েছে। সে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাপারী ও আড়তদাররা ৪৫-৪৬ কেজিতেই আমের মণ কিনে থাকেন। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, গোমস্তাপুরের রহনপুর ও ভোলাহাটে আগের নিয়মেই আম কেনাবেচা চললেও শিবগঞ্জ ও কানসাট বাজারে প্রশাসন মৌখিক ৪০ কেজি মণ হিসাবেই আম বিক্রির নির্দেশনা জারি করে।
ফরুকের দাবি, প্রশাসনের ৪০ কেজির নির্দেশনা মানতে না পারায় কানসাটের প্রায় ৫০০ আড়তে শনিবার ভোর হতে আম কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। ফলে লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হবে এখানকার আম ব্যবসায়ীদের।
তিনি বলেন, ‘সকল উপজেলাতে আম বেচাকেনার একই নিয়ম জারি করা হোক।’
ধোপপুকুর এলাকার আম ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দীন জানান, আমরা চলতি বছর নগদে আম বিক্রি করতে পেরে আশায় বুক বেধেছিলাম। ফলে ৪৫-৪৬ কেজি হিসাবের আম মণ বিক্রি করতে আমরা অসুবিধা মনে করিনি। কিন্তু প্রশাসন কৃষকদের দিক চিন্তা না করেই কোন উদ্দেশ্যে ৪০ কেজির নির্দেশ দিয়েছে এটা ভাবার বিষয়।
একই কথা বলেন, ‘শ্যামপুরের আম ব্যবসায়ী বাহাদুর, শাহবাজপুরের উমর ফারুকসহ অর্ধশতাধিক আম ব্যবসায়ীরা।’
ঢাকার বাদামতুলির আম ব্যাপারী আসলাম মৃধা বলেন, ‘কাঁচা আম কিনে ঢাকায় নিতে অনেক আম পচে নষ্ট হয়। এছাড়া ওজনও কমে যায়। ফলে দীর্ঘদিন হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের মণ ৪৫-৪৬ কেজি হিসাবে বেচাকেনা হয়। হঠাৎ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪০ কেজি করে আম কিনতে নির্দেশ দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি।’
তিনি আরও জানান, ব্যবসা করতে এসেছি কিছু লাভের আসায়। কিন্তু ৪০ কেজি হিসাবে মণ (আম) কিনে কিছুই থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক বলেন, ‘জেলার সকল আম সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই ৪০ কেজি হিসাবে মণ (আম) বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকল উপজেলাকে জানানো হয়েছে। কেও যদি ৪০ কেজির ওপরে মণ হিসাবে আম কেনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র: chapaibarta