ডেস্ক নিউজ
চাল ও আটা খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ ও মূল্যস্ম্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমজীবী ও প্রান্তিক মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাজেট বরাদ্দের বাইরে তিন লাখ টন চাল ও এক লাখ টন গমের বাড়তি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সিটি করপোরেশন, শ্রমঘন চার জেলা, অন্যান্য জেলা সদর ও পৌরসভায় ৭০৫টি কেন্দ্রে ওএমএস কার্যক্রম চালু রয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে নতুন করে আরও এক হাজার ৫৯টি কেন্দ্রে ওএমএস চালু হবে। এর পাশাপাশি চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে আমদানি শুল্ক্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশব্যাপী ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে চাল ও আটা কিনতে পারেন। গত সাড়ে ছয় মাসে বাজারের তুলনায় কম দামে চার লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ টন চাল ও আটা সরবরাহ করা হলেও বাজারে পণ্যের দাম কমেনি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে।
চলতি অর্থবছরে ওএমএস কার্যক্রমের জন্য বাজেটে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাল এবং তিন লাখ ৬৪ হাজার টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওএমএসের চাল ও আটার চাহিদা বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে কম দামে বিক্রির এই কার্যক্রম বাড়াতে সম্প্রতি বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম সমকালকে বলেন, ওএমএসের জন্য যে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল, তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে নতুন করে ওএমএস কার্যক্রম চালু করা হবে।
চালের আমদানি শুল্ক্ক কমানোর প্রস্তাব :চালের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য বেসরকারি খাতে কম খরচে আমদানির সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়তে থাকায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য চালের আমদানি শুল্ক্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর চালের দাম বাড়তে থাকলে সরকার নিজে ও বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ওই সময় চালের আমদানি শুল্ক্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। এরপর গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েকশ ব্যবসায়ীকে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী অনুমোদন নিলেও আমদানি করেননি। মাত্র তিন লাখ ৩১ হাজার টন আমদানি হয়েছে। কারণ ২৫ শতাংশ শুল্ক্ক দিয়ে আমদানির পর পাইকারি বাজারে যে দাম, তাতে ব্যবসায়ীদের পোষায়নি।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব বলেন, আমনের মৌসুমেও চিকন চালের দাম বাড়ছে। এরকম অবস্থায় ভবিষ্যতে যাতে দাম আর না বাড়ে, সে জন্য ফের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাড়ানো হচ্ছে মজুদবিরোধী অভিযান :৪ জানুয়ারি বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে ‘খাদ্যশস্যের মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও মনিটরিং’ সংক্রান্ত সভা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে বাজার মনিটরিং জোরদার ও মজুদ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারের চাল ও গম বিতরণ :চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ২৮ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩০ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ১২ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৯ টন চাল। বাকিটা আটা বা গম। চালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চার লাখ ৪৯ হাজার ৪১৮ টন সরবরাহ হয়েছে নায্যমূল্যের মাধ্যমে। ওএমএসের মাধ্যমে সরবরাহ হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৯৪৭ টন। এসেনশিয়াল প্রায়োরিটিজের (ইপি) মাধ্যমে এক লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টন, কাবিখার মাধ্যমে ২০ হাজার ৩৮৪ টন, ভিজিএফের মাধ্যমে এক লাখ ২১ হাজার ৮৭ টন, ভিজিডির মাধ্যমে এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৫১ টন ও জিআরের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৪১৭ টন চাল সরবরাহ করেছে সরকার। বাকি চাল ওপি, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হয়েছে।