ডেস্ক নিউজ
’সেতু পার হতে সময় লাগলো মাত্র দু’মিনিট, আগে ফেরির জন্য ঘাটেই বসে থাকতে হতো দুই ঘণ্টা। পিরোজপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের বরিশাল যেতে লাগতো তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। আর সন্ধ্যার পর এই রাস্তা পাঁচ ঘণ্টায়ও ফুরাতো না। সেতুর ওপর দিয়ে বরিশাল থেকে পিরোজপুর আসছি মাত্র এক ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে।’ কথাগুলো বাসচালক ফারুক বিশ্বাসের। কঁচা নদীর ওপর সেতু উদ্বোধনের পর যান চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার এ পথ পাড়ি দিয়ে সমকালকে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন তিনি।
বরিশাল-পিরোজপুর রুটের এই বাসচালক বলেন, অল্প সময়ে বরিশাল থেকে পিরোজপুর পৌঁছায় বেশ ভাল লেগেছে। যাত্রীরাও স্বস্তিবোধ করেছেন। আগে এই পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। ফেরিঘাটের ভোগান্তি, বিড়ম্বনা দূর হওয়ায় আমাদের সময় ও ব্যয়- উভয়ই সাশ্রয় হচ্ছে।
রোববার ১২টায় ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলানুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
আরেক বাসচালক কামাল হোসেন বলেন, ফেরিতে গাড়ি পার করে পিরোজপুর থেকে স্বরূপকাঠী উপজেলায় যেতে সময় লাগতো সাড়ে তিন ঘণ্টা। এখন সেতুর ওপর দিয়ে দেড় ঘণ্টায় স্বরূপকাঠী যাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া খরচও কমেছে। সেতু পারাপারে টোল ১১৫ টাকা, আর ফেরিতে লাগতো ১৩০ টাকা।
রোববার রাত থেকে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় নতুন এই সেতু দিয়ে ৬১৩টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে জানান টোল আদায়ে নিয়োজিত পিরোজপুর সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, এই সময়ে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, সরকারিভাবে সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারি ট্রাক ২৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১২৫ টাকা, বড় বাস ১১৫ টাকা, ছোট ট্রাক ৯৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহূত যান ৭৫ টাকা, মিনিবাস ও কোস্টার ৬৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৫০ টাকা, চার চাকার অন্যান্য যানবাহন ৫০ টাকা, কার ৩০ টাকা, তিন চাকার মোটরাইজড যান ১৫ টাকা, মোটরসাইকেল পাঁচ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল ও ঠেলাগাড়ি পাঁচ টাকা।
সেতুটি নির্মাণ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান চীনা রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকনাইসেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৫ ফুট প্রস্থের এ সেতুতে ব্যয় হয়েছে ৮৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। অবশিষ্ট ২৩৫ টাকা ব্যয় করেছে সরকার। সেতুটি ১০টি পিলার ও ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি বপ গার্ডার টাইপের সেতু। ৯টি স্প্যানের মধ্যে সাতটি ১২২ মিটারের ও দুটি ৭২ মিটারের। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার এবং অ্যাপ্রোচ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার। এ ছাড়া সেতুর দুই পাড়ে আছে এক হাজার ৪৬৭ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক।