ডেস্ক নিউজ
কুমিল্লায় পবিত্র কোরান অবমাননার অভিযোগের পর পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রæত খুঁজে বের করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যারা এই ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। তাদের জবাব দিতেই হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। জবাব দিতে হবে তাদের কেন তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করছে। রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত ‘র্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন’ অভিযানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তকরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে জেলা-উপজেলা প্রশাসন কাজ করে। এখানে কোন ঘাটতি আছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে, কোন প্রতিক্রিয়া করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমার পবিত্র কোরানের যদি কেউ অবমাননা করে, কোরান আমাকে অথরিটি দেয়নি যে ঘরবাড়ি ভাংব, সেটা ঠিক না। এটা অপরাধ। ধর্ম নিয়ে কেউ অবমাননা করলে প্রতিবাদ করতে পারি, সরকারের কাছে দাবি করতে পারি যে ধরে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কাজ করব, এটা সম্পূর্ণ আশাতীত ঘটনা। ইসলামে যেটা সবচেয়ে বড় অপরাধ ফিতনা।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যারা এগুলোর সূত্রপাত করল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বলা হয়েছে, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়া যাবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে (কুমিল্লার বিষয়ে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত ব্রিফ করছেন, সেখানে আমাদের গোয়েন্দারাও কাজ করছেন। সোমবার রাতেও আমরা বসেছিলাম। কুমিল্লার বিষয়ে আমার ধারণা যে খুব শীঘ্রই নিশ্চিত হয়ে যাব।
ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পল্লবীতে শাহীন নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে ভিডিও ফুটেজ থেকে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ওই ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে একটি মহল ফেসবুকে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত ‘র্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন’ অভিযানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তকরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছুক্ষণ আগেই আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক প্রচার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তারা সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে একটি নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে। দুই যুবক একজনকে চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করছেন। সেই হৃদয় বিদারক ঘটনা দেখে সবার হৃদয় কেঁপে উঠেছে। সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ক্লিপ আকারে প্রচার করে একটি মহল নোয়াখালীর যতন সাহাকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে মর্মে অপপ্রচার করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক ও অমানবিকও বটে।
মন্ত্রী বলেন, যারা এই ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। তাদের জবাব দিতেই হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। জবাব দিতে হবে তাদের কেন তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার মণ্ডপে ঘটনার প্রধান অভিযুক্তকে আমরা শনাক্ত করেছি। সে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আমরা ধরে ফেলতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস। কুমিল্লায় কেন সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানব।
তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত কোন মণ্ডপে কোন ধরনের কিছু ঘটেনি। কিন্তু এবার দেখছি অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। আসলে ঘটানো হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে কিছু উগ্র মানুষ সনাতন সম্প্রদায়ের একটি উপাসনালয়ে ভাংচুরের চেষ্টা করেছে। সেখানে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। সেখানে ৪ জন মারা গেছে। আজ (মঙ্গলবার) আরেকজন মেডিক্যালে মারা গেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেনই এই হত্যাকাণ্ড, কেন এই মৃত্যু। কার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার জন্য এই মৃত্যু? আমরা দেখলাম পরিতোষ নামে এক অল্প বয়সী ছেলে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেটা কেন্দ্র করে সহিংসতা। আমাদের পুলিশ বাহিনী তার বাড়িঘর রক্ষায় সর্বত্র চেষ্টা করেছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তার পাশের গ্রামে অগ্নিসংযোগ লুটপাট ভাংচুর করা হয়েছে। এটার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে রামু, নাসিরনগর ভোলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করা হয়েছে।