ডেস্ক নিউজ
সৌদি আরব থেকে এবার অপেক্ষাকৃত কম দামে ৩০ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার আমদানি করছে সরকার। প্রতি টন ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৩৪ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। এর আগে তৃতীয় লটে প্রতি টন সার আমদানি করতে ব্যয় হয়েছিল ৫৬০ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার। ফলে এবার প্রতি টন ইউরিয়ার পেছনে খরচ কমবে ২৬ দশমিক ৫০ ডলার। এই হিসেবে এবার তৃতীয় লটের চেয়ে চতুর্থ লটে সার আমদানির ব্যয় কমবে সাত লাখ ৯৫ হাজার মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমে যাওয়ার কারণে এই ব্যয় কমছে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে চতুর্থ লটে এই ইউরিয়া সার আমদানি করতে খরচ হবে ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফার্ম ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন এবং আপৎকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অপশনাল ১ লাখ ৮০ হাজার টনসহ ৬ লাখ ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সৌদি আরব থেকে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ২০০৭ সাল থেকে ইউরিয়া সার আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বলবৎ আছে।
সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) থেকে ক্রয় প্রস্তাবটি গত ২ আগস্ট তারিখে পাঠানো হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৬ লাখ টন এবং নিরাপত্তা মজুদ কমপক্ষে ৮ লাখ টনসহ মোট ৩৪ টন নির্ধারণ করে। ওই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিআইসি কর্তৃক প্রণীত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক সংগ্রহ পরিকল্পনা গত ২২ মে তারিখে শিল্প মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। সূত্র জানায়, এই অর্থবছরে সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ২০২২ সালের ১ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মে সময়ে ৩০ হাজার মেট্রিকটনের ১৬টি লটে ফার্ম ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং অপশনাল ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সৌদি আরবের সাথে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪র্থ লটের ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির লেক্যান নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৮-২২ আগস্ট। চুক্তি অনুযায়ী ইউরিয়া সারের দাম সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল তিনটি জার্নাল আইসিআইএস দ্য মার্কেট, আরগুজ নাইট্রোজেন (এফএমবি) এবং আইএইচএস মার্কেট নাইট্রোজেন রিপোর্টে (ফার্টিকন) প্রকাশিত মিডলইস্ট এফওবি/ অ্যারাবিয়ান গাল্ফ এফওবি বাল্ক দরের গড়ের ভিত্তিতে ইউরিয়া সারের একক দর নির্ধারিত হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৮ জুলাই তারিখের বুলেটিনে প্রকাশিত দর ৪র্থ লটের জন্য প্রযোজ্য হবে। সে প্রেক্ষিতে সৌদি আরব থেকে ৪র্থ লটের জন্য তিনটি জার্নালের গড় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩৪.৩৩ মার্কিন ডলার।
সৌদি আরবের সাথে চুক্তির শর্তানুযায়ী এই দর বিসিআইসি প্রত্যয়ন করেছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়। চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানটির দেয়া প্রতি টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের দর এফওবি আল জুবাইল বন্দর ৫৩৪.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সারের মোট দাম এক কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। গত ৩১ জুলাই মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১ মার্কিন ডলার= ৯৪.৭৫ টাকা হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এর আগে তৃতীয় লটে বাল্ব গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের প্রতি মেট্রিক টন সারের এফওবি দর ছিল ৫৬০.৮৩ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ চতুর্থ লটে প্রতি মেট্রিকটন সারের দাম ২৬.৫০ ডলার কমে আমদানি করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের সংগ্রহ পরিকল্পনার মধ্যে কাফকো বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ মেট্রিকটন, মুনতাজাত, কাতার থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন, সাবিক, সৌদি আরব থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিশন থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন। অর্থাৎ এই চার প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১৭ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন সার আমদানি করা হবে।