কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ভর্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়া গত সেশনে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নিতেও চায় না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ফলাফল (এইচএসসি পরীক্ষার ফল) বের হোক, ভর্তির জন্য পরীক্ষার্থীরা সময় যতটুকুই হোক পাবে। ফলাফল হলে তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আগাম কিছু বললে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আগের বছরের মতো আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। শিগগিরই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকও আহ্বান করেনি কর্তৃপক্ষ। একইভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কোনও সিদ্ধান্তে যায়নি। তবে এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের নিয়মেই পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে।
এ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তারাও ভর্তির বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। তবে তারা সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির সিদ্ধান্তটি এখনও বহাল রেখেছে।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় (পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়া) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেবে। নতুন করে আর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার মনে হয় এটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। আমরা গত বছর যাদের ভর্তি নিয়েছি, তাদের এখন পর্যন্ত এক সেমিস্টার অনলাইনে পড়ানো হয়েছে। তাদের একটি পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। এদের দ্বিতীয় বর্ষে উঠানোর আগে আমরা ভর্তি নিয়ে কী করবো? আগামী মার্চের আগে পরীক্ষা হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে যারা বসে রয়েছেন তারা পাস করার পর ভর্তির লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা মনে করছেন— ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফল প্রকাশের পর তাড়হুড়ো করে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিলে শিক্ষার্থীরা আশানুরুপ ফলাফল পাবেন না। ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল প্রত্যাশী জিনাত রিদওয়ানা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে কত নম্বরের নেওয়া হবে তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য আসছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পরীক্ষা নিলে কবে নেবে, তাও বুঝতে পারছি না। আগে থেকে জানতে পারলে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যেতো। ভর্তির জন্য কোচিংও করতে পারছি না। মানসিকভাবে আমরা অনেকটাই অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। তাছাড়া ফল প্রকাশের পর কতটা সময় পাবো, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
তবে শিক্ষার্থীদের কোনও দুশ্চিন্তা নেই উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়ার বাইরে আমরা কোনও প্রশ্ন করবো না। ফলে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তাছাড়া অনেক সময় এখন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হতো। সর্বশেষ আলোচনা ছিল ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়ার। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ৫০ নম্বর এবং লিখিত পরীক্ষায় ৩০ নম্বর এবং এমসিকিউ ২০ নম্বর। বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আলোচনা ছিলে। তবে এখন কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। নতুন করে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে সমন্বিতভাবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি করবে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শর্ত অনুযায়ী। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা জেএসসি ও সমান এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে।