ডেস্ক নিউজ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য কিছু মানুষকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে সন্ত্রাস দমনে তখনকার বিএনপি সরকার র্যাব সৃষ্টি করেছিল। তবে, তারা র্যাবকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পর র্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন, হত্যার তদন্তসহ মানবিক কাজই করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, তারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে। এদের কাজটি হচ্ছে বাংলাদেশে যখন একটি অস্বাভাবিক সরকার থাকে অথবা অবৈধ দখলকারী কেউ যদি থাকে তখন তারা খুব ভালো থাকে। তাদের খুব গুরুত্ব থাকে। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান তারা ভালো থাকে না। এ জন্য তারা সব সময় তার (সরকারের) বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। যতই ভালো কাজ করুক তারা পেছনে লেগেই থাকে কারণ তারা ভালো দেখতে চায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা সব সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের অভিযোগ, চিঠি—এই র্যাব সম্পর্কেও তাদের অভিযোগ। এ অপপ্রচার তারাই করেছে। ওখানকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের কাছে তথ্য পাঠানো, চিঠি দেওয়া—নানাভাবে তারা এ অপপ্রচার করে। সেখানকার আমাদের দূতাবাস সব সময় সক্রিয় ছিল। যখন এ ব্যাপার নিয়ে তারা আলোচনা করেছে তখন দূতাবাস কাউকে ঢুকতে দেয়নি। এটা আরও দুই বছর/তিন বছর আগের কথা। এ প্রক্রিয়া বহুদিন থেকেই চলছে। আমরা বারবার তাদের জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এখানে র্যাবের কোনো সদস্য যখন অন্যায় করেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আপনারা জানেন, আমাদের একজন মন্ত্রীর জামাই একটি অপরাধ করেছিল। মন্ত্রীর জামাই হিসেবে কিন্তু আমরা ক্ষমা করিনি। তাকে ঠিকেই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ অন্যায়কে কোনো প্রশ্রয় দেয় না—সে যেই হোক। আইনশৃঙ্খলা সংস্থার যে কেউ অপরাধ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। কাজেই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু থাকে না।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু কিছু লোক আছে তারা একটু বুদ্ধিজীবী, ইনটেলেকচ্যুয়াল, অকুম-সমুক নানা ধরনের সংগঠন তারা করে। এ সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলে তারা পয়সা যোগাতে পারে। এ ছাড়া তারা পয়সা যোগাতে পারে না। আমরা দেখেছি ব্যাপারটা সেখানেই। এখান থেকে তাদের একটা প্রতিনিধি গেল। সেখানে একটি সম্মেলন হলো। সেখানে আমাদের দূতাবাস বা কাউকে তারা থাকতে দেয়নি। উপস্থিত হতে দেয়নি। সেখানে আপত্তিটা আমাদের দেশের লোক করেছে। আজকে র্যাবের বিরুদ্ধে যে বদনাম এ জন্য অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের লোক বদনামটা করে। এই র্যাবের বিরুদ্ধে বদনাম তো আমার দেশের মানুষ করে যাচ্ছে। এ জন্য বলার কিছু নেই। আর সে জন্য এ নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চুন্নুর অপর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (রাশিয়া) যদি কোনো অন্যায় করে নিশ্চয় সেটা আমরা মানব না।
জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভোটের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে একক দেশ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ থেকে প্রস্তাব তোলায় বাংলাদেশ তাতে ভোট দেয়নি, তবে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ইউক্রেনের মানবাধিকার বিষয়ে হওয়ার কারণে ভোট দিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে যখন প্রথম প্রস্তাবটি এলো আমরা দেখলাম সেই প্রস্তাবে কোনো মানবাধিকারের কথা নেই। যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নেই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট। সেটা হলো রাশিয়া। তখন আমি বললাম না, এখানে তো আমরা ভোট দেব না। কারণ যুদ্ধ তো একা একা বাঁধে না। উস্কানী তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে তো বাধাঁল যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে কনডেম (নিন্দা) করা হবে কেন? সে জন্য আমরা ভোটদানে বিরত ছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদান স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, দুঃসময়ে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকব। কিন্তু তারা যদি কোনো অন্যায় করে নিশ্চয় সেটা আমরা মানব না। আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধাল কারা? সেটাও আমাদের দেখতে হবে। যেহেতু একটি দেশের বিরুদ্ধে এ জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ভোট দেব না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ভোট দেওয়ার এখন যে প্রস্তাবটা এসেছে—এ যুদ্ধের ফলে, ইউক্রেনের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে। সেখানে মানবাধিকারের বিষয়টি ছিল। দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকার বিষয়টি রয়েছে সে জন্য আমরা ভোট দিয়েছি। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যখন একটি দেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আমরা ভোট দিইনি। যখন মানবতার বিষয়টি সামনে আসল আমরা ভোট দিয়েছি। আমার মনে হয় এটা একেবারে স্পষ্ট। এটা নিয়ে আর কারো কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।