কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের আদলে ‘নিজস্ব জাতীয় সংগীত’ সৃষ্টি করে সুর দিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সিদ্ধেশ্বরী দারুল কুরআন আল আরাবিয়্যাহ মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি নাজিবুল্লাহ আফসারী। সম্প্রতি তিনি এই সংগীত সৃষ্টি করে নিজের পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের দিয়ে গাইয়েছেন। প্রচার করেছেন নিজের ফেসবুক আইডি ও ইউটিউবেও। ভিডিওতে তিনি লিখেছেন, ‘দারুল কুরআন আল আরাবিয়্যা মাদ্রাসার জাতীয় সংগীত।’
শনিবার (১৭ অক্টোবর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিবুল্লাহ আফসারী বলেন, ‘আসলে গজল গাওয়া ছিল উদ্দেশ্য। জাতীয় সংগীত বলে চালিয়ে দেওয়া বা এরকম কিছু চিন্তাধারা ছিল না। সুরটা আমার ভালো লাগে, ছোটবেলা থেকেই এই সুরটা আমার পছন্দের একটা সুর। চিন্তা করলাম যে, একটা গজল এই সুরে ইয়া করি। একটা গজল, আল্লাহ-তায়ালার নামে হামদ। আর একটা সুরে হামদ গাওয়া তো আর নাজায়েজ না।’
‘আমার দয়ার আল্লাহ, আমি তোমায় ভালোবাসি, চিরদিন তোমার দয়ায়, তোমার মায়ায়, অধম আমি বেঁচে আছি…। ’ শীর্ষক মুখরার পুরো সুরটি জাতীয় সংগীতের আদলে। নাজিবুল্লাহ আফসারী বলেন, ‘প্রথম কলি তো জাতীয় সংগীতের সুর, এরপর তো বাকিটা আমার সুর।’ নিজের এই সংগীত তিনি ১৩ অক্টোবর ফেসবুক আইডিতে (singernajibullah.afsari) শেয়ার করেন। এরপর ১৫ অক্টোবর তার ইউটিউব (najibullah tv) চ্যানেল নাজিবুল্লাহ টিভিতে আপলোড করেন। গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই সংগীত নিয়ে কওমি মাদ্রাসা ঘরানার শিক্ষার্থী ও আলেমদের মধ্যেও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
নাজিবুল্লাহ আফসারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আল্লাহ সুর দিয়েছেন, আল্লাহর সুরে গাওয়া তো আর হারাম না। গাইলাম, এটা রেকর্ডিং করলাম। মানুষ ইডারে জাতীয় সংগীত বইলা চালাই দিতেছে। আসলে জাতীয় সংগীত তো হচ্ছে দেশের কিছু কথা থাকতে অইবো, শুধু আল্লাহর নাম নিলে তো হবে না। রাসূল সা. এর নাম নিতে অইবো, কোরআন আর দেশের কথা বলতে অইবো— আমারটায় এমন কোনও কিছু ছিল না।’
নাজিবুল্লাহ জানান, তার সংগীতটি হচ্ছে হামদে হামদে বারিতায়ালা, আল্লাহর প্রশংসা করে গাওয়া। তিনি এটি রচনা করেছেন ও সুর করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এটা হচ্ছে হামদে বারিতায়ালা, আল্লাহর প্রশংসা করে গাওয়া। এটা লিখেছি ও সুর করেছি আমি। ছাত্রদেরকে ওইদিন একটু হাফ ক্লাস ছিল, চিন্তা করলাম সবাইকে নিয়ে একটা গজল গাই।’
জাতীয় সংগীতের সুরে নিজস্ব সংগীত রচনা করা কতটা ঠিক হলো প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এহন তো সমালোচনা করতেছে। অনেকে তো নম্বরও দিয়ে দিসে। প্রথম কলি তো জাতীয় সংগীতের সুর, এরপর তো বাকিটা আমার সুর।’
গত দুই মাস আগে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় নাজিবুল্লাহ আফসারী প্রতিষ্ঠা করেন দারুল কুরআন আল আরাবিয়্যা মাদ্রাসা। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লাসে পড়াশোনা করছে। গত ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার তিনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের সৃষ্টি সংগীত গাওয়ান ও ভিডিও করেন।১৩ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি প্রচার করেন। জাতীয় সংগীতের আদলে সৃষ্ট ধর্মীয় এ গানটিতে শিশুদের বুকে হাত দিয়ে গাইতে দেখা যায়। এসময় নাজিবুল্লাহ আফসারীই শিক্ষার্থীদেরকে গাইড করছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী বলছেন, ‘মাই গড। জাতীয় সংগীত বিকৃত করার কোনও সুযোগ নেই। আর এটা তো কেবল জাতীয় সংগীতই নয় যে, কোনও ব্যক্তি একটি গান লিখেছেন, এখন আমার ইচ্ছে হলো একটি শব্দ বা দুটো শব্দ যোগ করে দিয়ে কিছু একটা করবো। এটা করলেই আমাদের সেকশন ৭৮ -এ কপিরাইট লঙ্ঘন হবে। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা ওই শিক্ষককে ডাকবো।’
নাজিবুল্লাহ আফসারী লিখিত তার প্রতিষ্ঠানের সংগীতটি হলো—
আমার দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার দয়ায়
তোমার মায়ায়
অধম আমি বেঁচে আছি…
দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি
তব দয়াতে
এই ধরাতে আমি
তব দয়াতে
এই ধরাতে আমি
নেয়ামতে ডুবে আছি
দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি
আমারও এ বুকে
রেখেছি তোমাকে
যপি তোমায় দিবানিশি…
দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি…
যে তোমায় ভুলে যায়
তাকেও দাও ঠাঁই
যে তোমায় ভুলে যায়
তাকেও দাও ঠাঁই
যদি তওবা করে ফিরে আসি…
দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার দয়ায়
তোমার মায়ায়
অধম আমি বেঁচে আছি…
দয়ার আল্লাহ
আমি তোমায় ভালোবাসি…