আমরা সমগ্র জীবনব্যবস্থার এক কাঁধে তুলনামূলক বিবেচনা অন্য কাঁধে প্রতিযোগিতার টানটান রশি বেঁধে বয়ে চলি আমৃত্যু। যেমন আমরা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি। অন্যদিকে জন্ম থেকে মৃত্যু, শ্রেণিকক্ষ থেকে খেলার মাঠ সর্বত্র প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি। আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তায় সবাই মিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো শেখানোর পরিবর্তে টেনেহিঁচড়ে পিছিয়ে যাওয়া শিখিয়েছে-শেখাচ্ছে কেউ কেউ। মুক্ত স্বাধীন দেশেও যেন আমাদের চিন্তার মুক্তি মেলেনি এতদিনে।
আমরা সফলতা বলতে প্রথম স্থান অর্জন করাকে বুঝি। এখন অবধি বেস্ট-থ্রি পুরস্কৃত করার রীতিই সর্বত্র চলমান। বিষয়টা এমন যেন, একজন-দুইজন বা তিনজনের বেশি কারো ভালোর স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ নেই।
নিজের কাজের মূল্যায়ন করা হয় ভিন্ন কাউকে আদর্শ বিবেচনা করে নিজে কতটা পিছিয়ে সেই তুলনামূলক বিচারে। নিজের প্রতি ভরসা নেই। মূলত মানসিকভাবে আমরা দাস। আমাদের গ্রীবা চির অবনত, আমরা অর্থ-ক্ষমতা বা মুখের জোরে এগিয়ে যাওয়া মিয়াদের চায়ের কাপ, স্যান্ডেল-জুতা দেখলে সেগুলো বয়ে দিতে হাত সংযত করতে পারি না। আমরা কাজ করে আস্থা অর্জনের চেয়ে নির্বোধের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে, তোষামোদি করে সময় পার করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি ভীষণ। আমাদের দাসত্বের জীবন প্রিয়। সৃষ্টি করতে নয়, বরং সৃষ্টির পূজা করতে আমাদের সমগ্র জীবনব্যাপী থাকে নানা আয়োজন।
বাঙালির হয়ে দাসত্বের এই ধারাবাহিক জীবনপ্রবাহের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো একজন সফল মহানায়ক যেমন আমাদের বঙ্গবন্ধু তেমনি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিজয়ের সংগ্রামমুখর ইতিহাস রচনা চলমান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সংগত কারণেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার কাজের আলোচনা বা প্রশংসার ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা তাদের কাজের সঙ্গে তুলনামূলক বিবেচনা করতে ব্যক্তিগতভাবে আমি দ্বিমত পোষণ করি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সংগ্রামের সমকালীন সময়ে সংগ্রামী নেতা অন্য অনেকে থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বাঙালির মুক্তির মহানায়ক হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে দুটি কারণ হলো অন্যদের সঙ্গে নিজের কাজের তুলনামূলক বিচার না করা ও নিজের কাজের প্রতি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হওয়া।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও রাষ্ট্র এবং দল পরিচালনার ক্ষেত্রে আজাবধি সেই শিক্ষাই অনুসরণ করে চলেছেন। কাজেই সফলতার সাম্ভ্যবতার বিচারে নয়, বরং জনগণের প্রয়োজনীতাকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার তড়িৎ গতি চলমান রাখবার এনারজেটিক পাওয়ারের নাম শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা সরকারের টানা একযুগ পূর্তি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। রাষ্ট্রের কতটুকু অগ্রগতির কথা ছিলো কতটুকু হয়েছে তার হিসাব নিজ দেশের অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ বা ঢাকা শহরকে উন্নত আধুনিক ও দ্রুতগতির করতে মেট্রোরেল প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজই শেষ কথা নয়। বরং বিনামূল্যে সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীতকরণে পটেনশিয়াল স্টেপ বাস্তবায়ন, বৈশ্বিকমানের শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষা খাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এখন এদেশের বাস্তবতা।
করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের যে ২২টি দেশের জিডিপির পজিটিভ গ্রোথ হয়েছে বাংলাদেশ সেখানে অন্যতম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ প্রকাশিত, কোভিড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা দেশগুলোর তালিকায় ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং’, এ বিশ্বে বাংলাদেশ ২০তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। বৈশ্বিক মন্দার এই সময়ে শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক লিডারশিপ বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার উন্নয়ন এখন শুধু মেগা প্রকল্পে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তবতা।
কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ার সুবাদে এদেশের কৃষকদের সকল কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও ভর্তুকি বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার বরাবরই কৃষিবান্ধব সরকারের খ্যাতি অর্জন করে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অগ্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ভূমিকা রেখে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
শিল্প খাতে সমৃদ্ধি সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে শ্রমিকদের বেতন ভাতা, নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ কাঁচামাল সহজলভ্য করতে কাজ করেছে সরকার। নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা, বিশেষত নারী উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাণিজ্যে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার সুপার অ্যাকটিভ।
চিকিৎসা খাতে প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে অধিক চিকিৎসক নিয়োগ, গ্রামপর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, মাতৃসদন কেন্দ্র ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বস্তরে সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তার সকল চিকিৎসা দেশে নেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন ও নিরাপত্তা বোধ করার কথা উল্লেখ করেছেন।
ওষুধ শিল্পের উন্নয়নের পরিসংখ্যান ওষুধ রপ্তানিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গৃহহীন মানুষের পূনর্বাসন করার জন্য চতুর্মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কোনো শিক্ষার্থীর জানামতে, তার নিজ এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকলে খোঁজ দিতে বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সরকারের সঙ্গে নাগরিকের সরাসরি সম্পর্কের এই প্রথা একমাত্র শেখ হাসিনাই চালু করে চলমান রেখেছেন।
বিগত একযুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে নতুন করে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল বিজয়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, স্থলভাগে বাংলাদেশের সীমানা বৃদ্ধি, আইসিটি পার্ক, গুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার, বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় উন্নতি স্বরূপ জাতীয় গ্রিডে ক্রমাগত বিদ্যুতের সম্প্রসারণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দরিদ্রতা হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সকল সেবা ডিজিটালাইজড করে সহজীকরণ, বেকারত্ব হ্রাস, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা ও রায় কার্যকর করা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে কার্যকরে সুস্পষ্ট ভূমিকা রেখেছে।
জাতির পিতার রাজনৈতিক অবদানের উত্তরসূরি হিসেবে নয়, পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের পর ইতিহাস বিকৃতির কালো অধ্যায় সংগ্রামী মোকাবিলায় অতিক্রম করে এবং জলপাই রঙের বুলেট চক্ষু পরোয়া না করে বাঙালি গণমানুষের হৃৎস্পন্দন নিজ হৃদয়ে ধারণ করে বাঙালির মুক্তির পতাকা নতুন করে উত্তোলনের সংগ্রামী নাম শেখ হাসিনা।
মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রার সঙ্গে সুপারসনিক গতি দিয়ে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে কাউন্ট্যাবল কান্ট্রিতে পরিণত করেছেন। সমুদ্রের উর্মিমালা বিজয় থেকে মহাকাশের মেঘপুঞ্জির ওপারে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণসহ গত একযুগে সকল বিজয়ের সম্মিলিত কণ্ঠই শেখ হাসিনার জয়ধ্বনি।