ডেস্ক নিউজ
এক মাসেরও কম সময় আছে খালেদা জিয়ার মুক্ত জীবন। যদি তিনি জামিন বৃদ্ধির আবেদন না করেন এবং তার এই জামিন বৃদ্ধির আবেদন যদি সরকার নামঞ্জুর করে তাহলে আবার জেলের জীবনে ফিরে যেতে হবে তাকে। আর জামিন বৃদ্ধির জন্য বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিবে। এই নিয়ে এখন বিএনপির মধ্যে তোলপাড় চলছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, খালেদা নয় তারেকের রাজনীতি থেকে অবসর প্রয়োজন। তারেককে অবসর দিয়ে যদি খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধি করা যায় তাহলে সেই পথেই হাঁটতে চান বিএনপি নেতৃবৃন্দ। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ ‘র ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে গিয়েছিলেন এবং ২৫ মাস কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয়রা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করে তাকে এই চিকিৎসার জন্য দুই শর্তে জামিনে মুক্ত করেন। গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে তার বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন। জামিনে যে অঘোষিত শর্ত, সেই অঘোষিত শর্তগুলো তিনি এখন পর্যন্ত মেনে চলছেন। তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন নাই এবং রাজনৈতিক কোন বক্তব্য বিবৃতিও দেন নাই। এখন বেগম খালেদা জিয়ার ভাই এবং তার বোন বলছেন তার সুচিকিৎসা এবং উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। একদিকে যেমন তার জামিন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, অন্যদিকে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতিরও দরকার।
আর এ জন্য তারা সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন তারা খুব শীঘ্রই দেবেন বলে জানা গেছে। বেগম জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন, এখনো তাদের হাতে কিছু সময় আছে এবং তারা আশা করছেন এই সময়ের মধ্যে তারা আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছুতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর ‘মহানুভবতায়’ তারা বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবেন। তবে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং তার বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই মুচলেকা দিতে হবে যে, তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না বা দলের নেতৃত্বে থাকবেন না। জামিন পেয়ে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে এই রকম মুচলেকার রীতি বহুল প্রচলিত। তবে এই বিষয়টি বিএনপির একাধিক নেতার কানে গেছে এবং তারা বেগম খালেদা জিয়ার অবসরের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে বেগম জিয়ার পরিবারের সঙ্গেও বিএনপির একাধিক নেতা সাক্ষাৎ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া যদি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বা বিদায় নেন সেটি বিএনপির জন্য ভয়াবহ অপমানজনক হবে এবং এর ফলে বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে যেতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, সরকারের সঙ্গে যে দেন দরবার হচ্ছে সেই দেন দরবারে খালেদা জিয়া নয়। বরং তারেকের রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের বিষয়টি যদি আলোচিত হয়, তবে সেটি ভালো হয়। বিএনপিতে এখন তারেক জিয়ার জনপ্রিয়তা তলানিতে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে তার ভূমিকা এবং বিভিন্ন কমিটি মনোনয়ন ইত্যাদি নিয়ে যে বাণিজ্য এসব কারণে বিএনপি নেতাদের মধ্যে তারেকের প্রতি অনাস্থা ও অনাগ্রহ অনেকগুণ বেড়েছে। এই অবস্থায় তারা মনে করে যে, তারেক হল বিএনপির জন্য একটা আপদ। খালেদা জিয়া হল দলের ঐক্য ও অখণ্ডটার প্রতীক। খালেদা জিয়া আছে এজন্য বিএনপি টিকে আছে। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কখনো সংগঠিত হতে পারবে না এবং বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবেও সংগঠিত হতে পারবে না। এ কারণেই বিএনপি নেতৃবৃন্দ নতুন করে সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করার প্রস্তাব দিচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারকে। তারা বলছে যে, তারেকের বিনিময়ে যাতে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যায়। দলের প্রস্তাবনাটা এই রকম, তারেক দলে থাকবেন না, তারেক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে না। খালেদা জিয়াও নামকাওয়াস্তে দলে থাকবেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দলের প্রধান থাকবেন। তবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না। এই রকম একটি প্রস্তাবনা সরকারের কাছে দেওয়া যায় কিনা। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় খুব একটা উৎসাহী নয়। তারা গতবার যে, বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছিলে তারা তখনও বিএনপিকে অন্ধকারে রেখেছিল এবং এখনো বিএনপিকে বাদ দিয়েই তারা এই আলোচনা এগিয়ে নিতে চায়। শেষ পর্যন্ত তারা কি করবে সেটা তারা এবং খালেদা জিয়া মিলে সিদ্ধান্ত নিবেন।