ডেস্ক নিউজ
মারণভাইরাস করোনার কালো মেঘে আচ্ছন্ন গোটা বিশ্ব। পৃথিবীকে ঝাঁকুনি দেওয়া এই অতিমারি থেকে বেরিয়ে আসতে সব দেশেই চলছে প্রাণপণ লড়াই। দাপিয়ে বেড়ানো করোনা সংক্রমণের টুঁটি চেপে ধরতে নিতে হচ্ছে নানা কৌশল। অর্থনীতির চাকা গতিশীল রেখে করোনার বিস্তারের ঝাপটা বেহিসাবি হতে না দেওয়াটাই এখন সব দেশের একমাত্র আরাধনা। বাংলাদেশও আঁকছে সেই ছবি। করোনাযুদ্ধে দেশের মানুষের ফিকে হওয়া হাসি আবার মুখে ফেরানোর পাশাপাশি মজবুত অর্থনীতিতে চোখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
করোনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের মানুষকে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগাদা। পর্যায়ক্রমে কঠোর বিধি-নিষেধ দিয়ে চলছে এই ভাইরাসের লাগাম হাতে রাখার চেষ্টা। অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্র যেখানে এখনো টিকার মুখ দেখেনি, সেখানে টিকার ব্যাপারে বাংলাদেশ দেখিয়েছে দারুণ মুনশিয়ানা। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা নিয়ে সংকট দেখা দেওয়া মাত্রই বিকল্প উৎসর খোঁজে নামে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর ত্বরিত উদ্যোগের ফলে চীনা টিকা এরই মধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। ওই দেশ থেকে পর্যায়ক্রমে আরো টিকা আসবে। রাশিয়ার টিকা আনার জন্য নেওয়া হয়েছে কার্যকর উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল মাসে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘যত টাকা লাগুক, টিকা আনবই।’ দেশের মানুষের কল্যাণ ও জীবন রক্ষায় বঙ্গবন্ধুকন্যার এই অঙ্গীকার শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বাস্তবিক অর্থেই তিনি করে দেখিয়েছেন। গেল মার্চে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া জ্যানেট স্কটল্যান্ড ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সফল তিন নারী নেতার একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান গত সপ্তাহে ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিতে গেলে আর্চ বিশপ পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন।
গত বছর বিশ্ব যখন করোনা মহামারিতে জবুথবু, তখন করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তখনই ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ তহবিলে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দেয় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সময়ই সাম্য, ন্যায় ও জাতীয় মালিকানার নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই সবাই যেন ভ্যাকসিন পায় বা যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তারা যেন তা পায়, একজনও যেন বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি ভারতের দ্য প্রিন্টে প্রকাশিত এক কলামে বলা হয়েছে, ক্রমাগত অগ্রসরমাণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। এতে বলা হয়, মহামারির এই সংকটময় মুহূর্তে কভিড মোকাবেলায় ভারতকে ত্রাণ এবং শ্রীলঙ্কাকে ডলার সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখিয়েছে। এর আগে বিশ্বের প্রভাবশালী একাধিক গণমাধ্যম শক্ত হাতে করোনা মোকাবেলার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশংসা করে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মানুষের কল্যাণ ও ইশতেহার বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। শেখ হাসিনা কথা রেখেছেন। ইশতেহার বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকার যে সফল, তা বিশ্বনেতৃত্ব ও গণমাধ্যম এরই মধ্যে স্বীকার করে ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এই করোনা দুর্যোগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পক্ষে যা সম্ভব হয়নি, দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে তা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ধরে রাখতে কয়েক ধাপে প্রণোদনা প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে। অর্থনীতিবিদরাও আশায় বুক বেঁধেছেন, দুর্যোগকালে অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে প্রবৃদ্ধির হার দ্রুতই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে কমতে থাকে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে কি না—এই শঙ্কাও তৈরি হয়। সেই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষক ও কৃষিকে গুরুত্বের শীর্ষে রাখেন। আর এ কারণেই মহামারিতেও খাদ্যের অভাব হয়নি বাংলাদেশে। এই দুর্যোগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বাহবা কুড়িয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও বলেছিলেন, শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই চলবে না, দুর্যোগের এই সময়ে সচল রাখতে হবে অর্থনীতির চাকাও। তাই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সংক্রমণের শুরুতেই ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ, নগদ টাকা আর খাদ্য সহায়তা দেন তিনি। তাই করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘর। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন রেকর্ড। কিছুটা কমে যাওয়া প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে এখন সর্বোচ্চ নজর সরকারের। মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নেওয়া। আর এই অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবার এবং অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক লাখ কৃষকসহ ৩৬ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন। তিনি নিম্ন আয়ের লোকজনকে পরিবারপ্রতি আড়াই হাজার টাকা করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ কোটি টাকা দেন। এ ছাড়া ওই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পকে পাঁচ কোটি টাকা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুজিববর্ষে যাচাই-বাছাই শেষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ১২ মে জিটুপি পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এই আর্থিক সহায়তার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন।
এদিকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি এখন টালমাটাল, কিন্তু মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল। এর পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি শক্ত হাতে এই মহামারিকে মোকাবেলা করছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে বিশ্বের অন্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে প্রাণহানি তুলনামূলক কম হয়েছে। অর্থনীতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা করা হলেও তেমনটা ঘটেনি। এটা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বড় সফলতা।’