ডেস্ক নিউজ
দরিদ্র মানুষের সম্মানের কথা চিন্তা করে রাতের আঁধারে গোপনে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের মানুরী গ্রামের তরুণরা।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যার পর প্রথম ধাপে গ্রামের ৪৫টি দরিদ্র পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় এসব ত্রাণ সামগ্রী।
এই সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এলাকার তরুণরা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবারগুলোর কষ্ট দূর করতে তাদের এ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা দরকার এমন চিন্তা থেকে ত্রাণ বিতরণের এ উদ্যোগ নেন এলাকার কয়েক তরুণ। আর তাদের এ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন গ্রামের চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা। যে যার সাধ্যমত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
‘মানুরী আলোক বর্তিকা’ নামে একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে চলে অর্থ সংগ্রহের কাজ। বিকাশ, রকেট, নগদের মতো টাকা পাঠানোর মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি সরাসরি হাতে হাতে সংগ্রহ করা হয় টাকা।
মাত্র ২/৩ দিনের চেষ্টায় একই গ্রামের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছলদের অর্থায়নে দরিদ্রের জন্য কেনা হয় চাল, আলু, তেল, আটা, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, সাবান, ওরস্যালাইন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় প্রথম ধাপের ত্রাণ সামগ্রী।
গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার এমন প্রস্তাব দিয়ে ফেসবুক একটি পোস্ট দেয় ইউসুফ খান নামের এক তরুণ। এখান থেকে শুরু।
প্রচার বিমুখ তরুণরা জানান, প্রস্তাবটি শোনার পর এটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ-শ্রম-বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে গ্রামের ছোট বড় অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মনে হল সবাই আগে থেকেই তৈরি ছিলেন।
তরুণদের কয়েকজন বলেন, আমরা গ্রামের স্বচ্ছল সবার কাছে এখনো আমাদের আহ্বান পৌঁছাতে পারিনি। যারা শুনেছেন সবাই এগিয়ে এসেছেন। নতুন করে আরও অনেকে সহায়তা করছেন।
দরিদ্রদের ছবি না তোলা ও নাম গোপন রাখা হচ্ছে জানিয়ে তরুণরা বলেন, হাতে গোনা কয়েকজনকে দিয়ে আমরা ত্রাণ বিতরণ শুরু করছি। যাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তাদের কোনো ছবি তোলা বা নাম প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
কঠোরভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, আয় ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য আমরা ত্রাণ গ্রহণকারীদের একটা তালিকা সংরক্ষণ করছি। তবে এটি কখনোই প্রকাশ করা হবে না। শুধুমাত্র স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বা কেউ কোনো অনিয়মের প্রশ্ন তুললে তা প্রমাণের জন্য এটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কে কত টাকা বা অনুদান হিসেবে কি দান করছেন এবং কত টাকা কিভাবে ব্যয় হচ্ছে খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসেব রাখা হচ্ছে। যাতে কারো কোনো সন্দেহ হলে যাচাই করা যায়।
সারা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে-মহল্লার মানুষ এমন উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করে এসব তরুণরা বলেন, আমাদের আশপাশের গ্রামে যারা পরিচিত আছে তাদের আমরা এই পরামর্শ দেবো। কিন্তু আমাদের আহ্বান থাকবে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণের কাছে সবাই যেন উদ্যোগী হয় এবং একই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সম্মানের কথা মাথায় রাখে। অনেকে আমাদেরও আগে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের আমাদের পক্ষ থেকে ভালবাসা।
ত্রাণ গ্রহিতাদের একজন বলেন, ওরা চুপিচুপি আমাদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। ওরা আমাদের সম্মানের কথা চিন্তা করেছে এটা অনেক ভাল লেগেছে।