কর্মমুখর হচ্ছে ফুল শিল্প। ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন চাষিরা। আম্পান ও ভয়াবহ করোনার ধাক্কা সামলে নিয়েছে শিল্পটি। টানা পাঁচ মাস একেবারেই মন্দা ছিল কৃষির এই খাতটি। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও উৎকর্ষতার প্রতীক ফুল সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ফুল ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু সৌন্দর্য কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, ফুল থেকে আসে কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রা। বহু মানুষের ভাগ্য বদলের মাধ্যম ফুল। বর্তমানে এটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফুল শিল্প সমস্যা সঙ্কট কাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে।
চলছে মাঠে মাঠে শেড তৈরি, চারা রোপন ও পরিচর্যা। আর ক’দিন পরেই ফুলে ফুলে রঙিন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। দেখা যাবে সবুজের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা আর লাল, হলুদ. কমলা, খয়েরী ও মেজেন্ডা রঙের জারবেরা, ঝাউ কলম ফুল, গøাডিওলাস, লিলিয়াম, লাল গোলাপ, কালো গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা ও জুইসহ রকমাররি ফুলে মনমাতানো অভুতপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য। যা দেখলে পাষাণ হৃদয়ও নরম হবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যশোর, ঝিনাইদহ, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ২৫টি জেলার ৬হাজার হেক্টরে পুরাদমে ফুল উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফুল চাষ, বিপণনসহ সেক্টরটিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। আম্পান ও করোনায় বিরাট ক্ষতি হয়েছে ফুল শিল্পে। প্রতিবছর গড়ে ১৪শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হচ্ছে দেশে। এর মধ্যে মাত্র আড়াইশো’ কোটি টাকার ফুল রফতানি হয়। এই অংক অনায়াসেই হাজার কিংবা দেড় হাজার কোটিতে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু নানা কারণে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তার তথ্যমতে, দেশের মোট চাহিদার ৭৫ ভাগ ফুল উৎপাদন হয় যশোরে। বছরে যশোরেই প্রায় ৩শ’কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে।
যশোর মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতির প্রফেসর সেলিম রেজা জানালেন, ফুল খাতটি খুবই সমৃদ্ধ। এর রয়েছে অর্থনীতির গুরুত্ব। আমাদের দেশের ফুল বিদেশে চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রঙীন ইতিহাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।
যশোর-বেনাপোল সড়কের গা ঘেষা ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের রাজধানি ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে নানা জাতের ফুল উৎপাদন হচ্ছে। বিরাট কর্মমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যশোরের ফুলচাষিরা শেড তৈরি চারা বপন ও রোপন, পরিচর্যার কাজে ব্যতিব্যস্ত। সম্ভাবনাময় এই সেক্টরটি গতিশীল করতে সরকারি প্রণোদণা জরুরি বলে ফ্লাওয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফুলচাষি গদখালির হাড়িয়াখালি গ্রামের সাজেদা বেগম জানালেন, অসুস্থ স্বামীর অনুপ্রেরণা আর স্বল্পপুঁজি নিয়েই বাড়ির পাশেই বর্গা নেওয়া ১০ কাঠা জমিতে শুরু করি জারবেরা ফুল চাষ। সাজেদার এখন ফুলের বাগান হয়েছে দেড় একর। সাজেদার পঙ্গু স্বামী ইমামুল হোসেন বলেন, আমার ২৫ বছরের জীবনে ফুল চাষে আম্পান ও করোনার মতো ক্ষতির মুখোমুখি হয়নি কখনো। আমরা আবার ঘুরে দাড়াচ্ছি, পুরাদমে ফুল উৎপাদন শুরু করেছি।