মোহনগঞ্জ পৌর শহরে অন্তত ৫০ জন ভূমিহীনের বাসস্থানের জন্যে সরকারি প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু গুচ্ছগ্রাম’ করা হবে। কিন্তু জমি নেই। এগিয়ে এলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন।
নিজের বাড়ির সামনে থাকা এক একর ৬৪ শতাংশ জমি বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দেন সাংসদ। এ জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা।
এলাকাবাসী বলছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে মানুষের কল্যাণে এই জমি দান নজির হয়ে থাকবে।
রেবেকা মমিন নেত্রকোণা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ, খাদ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল মমিনের স্ত্রী তিনি। মোহনগঞ্জ পৌর শহরের কাজিয়াটি এলাকায় বাড়ি।
মোহনগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ ইকবাল বলেন, ‘সাংসদ গৃহহীন মানুষদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স স্থাপনে জমি দিয়েছেন। খোলার মাঠ, ঈদগা ও মসজিদ স্থাপনে জমি দিয়েছেন।’
এই সংসদ সদস্যের স্বামী আব্দুল মমিন ও তার শ্বশুর খান সাহেব আব্দুল আজিজ এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সরকারি দপ্তর স্থাপনে অন্তত বর্তমান বাজার মূল্যে ৩০০ কোটি টাকার জমি দান করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এটি জনসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
কাজিয়াটি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান একসাথে থাকা পুরো জমিটি দেখিয়ে বলেন, ‘এলাকার যাদের বাড়িঘর নাই, তারা এখানে জায়গা পাবে, বসবাস করতে পারবে। আমরা এলাকার সবাই এতে খুশি।’
মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়কাশিয়া-বিরামপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের উপ- সহকারি কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, কাজিয়াটি এলাকায় বর্তমানে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা শতাংশ জমি বেচাকেনা হচ্ছে। সেই হিসেবে ১৬৪ শতাংশ জমির বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা হবে।
মোহনগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘মোহনগঞ্জ শহরে বেশিরভাগ সরকারি দপ্তর এই পরিবারের জমিতে গড়ে উঠেছে। রেলস্টেশন তাদের জমিতে। বাজার, মাঠ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা তাদের জমিতে। আর সব জমিই তারা দান করেছেন।’
এলাকার ভূমিহীন রোকন মিয়া বলেন, ‘এমপি সাহেবে যে জায়গা দিতাছে আমরা গরীবে পায়াম। আমরা এতে খুব খুশি।’
সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন খুবই সাধারণ জীবন যাপন করেন। তাদের কাজিয়াটির বাড়িটিও সাদামাটা।
তিনি বলেন, ‘মানবতার খাতিরেই এই জমিটা দান করলাম। কিছু জমি আছে। এই জমি থেকেই দিলাম। ভাবলাম এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী চলছে। তার প্রতি আমার ভালবাসা আছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুবই ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী স্মরণীয় থাকবে। মানবতা আর বঙ্গবন্ধুকে স্মরণেই এই জমি দিয়েছি। এখানে সরকারের প্রকল্পে গরীবদের ঘর করে দেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘রেবেকা মমিন কালেক্টরেটের কাছে জমি দান করবেন। কালেক্টরেট সরকারের নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন রয়েছেন তাদেরকে ঘর করে দিতে জায়গা বন্দোবস্ত দেবে। সেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি শিগগিরই দলিল হস্তান্তর করবেন। কাগজপত্র যাচাই, জায়গার মাপজোক করা হচ্ছে। আশা করছি খুবই দ্রুত জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হবে।’