ডেস্ক নিউজ
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম ও রংপুরের চা বাগানে কর্মরত দুস্থ, অসহায় চা শ্রমিক পরিবারগুলোকে এককালীন ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে এই বরাদ্দ থেকে। প্রায় ৬০ হাজার পরিবার এ বরাদ্দের আওতায় সহায়তা পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় বাজেটে নিম্ন আয়ের অনগ্রসর পেশাজীবী হিসেবে চা শ্রমিকদের জন্য প্রথম বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ওই বরাদ্দের পর গত এক দশকে তা বেড়ে ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যা প্রতিবছর ৫ কোটি টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করোনা মহামারির কারণে গত দুই অর্থবছরে বরাদ্দ না বাড়িয়ে একই রাখা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে আবার বরাদ্দ বেড়েছে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বরাদ্দের পরের বাজেটে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বাজেটে ৫ কোটি টাকা করে বেড়ে এটি ২৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই বরাদ্দ আর বাড়েনি। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল, এমন কি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চার দশকের বেশি সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো সরকারই চা শ্রমিকের জীবন মানোন্নয়নে জাতীয় বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো চা শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ২০১৩ সালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থ অসহায়, অনগ্রসর চা শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বাজেটে চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ রাখার সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সিলেটের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মৌলভীবাজারের আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলী। দুস্থ চা শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এই দুই রাজনীতিকেরও বিশেষ অবদান ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৩ সালের ২ জুন বাজেটে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার বর্তমান দাবিটিও ছিল।
ওই সময় বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাহবুব আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর, আমার যতদূর মনে পড়ে চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিল। তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য এখন বিদ্যালয় হয়েছে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালও আছে। তবে সমাজের অনগ্রসর পেশাজীবী হিসেবে তাদের এই সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে চা বাগানের সংখ্যা ২৪৬টি এবং চা শ্রমিকের সংখ্যা মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিবন্ধিত চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, দেশে চা বাগানের সংখ্যা ২৩১টি এবং নিয়মিত শ্রমিক ১ লাখের ওপরে। তাদের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত মানুষ রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ।
এ কর্মসূচি সম্পর্কে সমাজসেবা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। প্রায় ২৫টি দেশে চা রপ্তানি করা হয়। এই চা উৎপাদনে যারা সরাসরি জড়িত তারাই চা-শ্রমিক। কিন্তু চা-শ্রমিকরা সব নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে প্রতীয়মান। তাদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সবার দায়িত্ব।