ভারতের সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এটা কারোর অজানা নয়। পারস্পারিক এই সম্পর্কের কথা দুই দেশ বহুবার স্বীকার করেছে। গত কয়েক মাস ধরে সেই সম্পর্কের ভাটা পরেছে চীনের সঙ্গে ইরানের মধ্যে ২৫ বছরের একটি ‘কৌশলগত সহযোগিতার‘ চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া চূড়ান্ত করে ফেলার পর।
এরই মধ্যে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি। তারা জানাচ্ছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত সপ্তাহে অনেকটা নীরবেই তেহরানে গিয়ে দিন কাটিয়েছেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তেহরানে নামেন মস্কোতে সাংহাই সহযোগিতা জোটের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে। আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর মস্কো থেকে ফেরার পথে মঙ্গলবার সারাদিন কাটিয়েছেন তেহরানে। নীরবে এই সফর নিয়ে সরকারীভাবে রিফুয়েলিং অর্থাৎ বিমানে তেল ভরার যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভারতের দুই মন্ত্রী সেই তেল দুবাই বা আবুধাবিতে না ভরে তেহরানে কেন নামলেন?
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই যে চিরশত্রু চীন এবং পাকিস্তানের সাথে ইরান যেভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত তাতে গভীর উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে দিল্লির জওহারলাল নেহেরু ইউনিভারসিটির (জেএনইউ) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদোয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, চীনের সাথে ইরানের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে ভারতের মাথাব্যথা বাড়ছে।
তিনি বলেন, ভারতের কাছে ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। ভারত কোনোভাবেই তা খোয়াতে চায় না।
অধ্যাপক ভরদোয়াজ বলেন, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য ভারতের কাছে ইরানের গুরুত্ব বিশাল। সে কারণেই ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়েছিল ভারত। সেই সাথে, তিনি বলেন, জ্বালানির জন্য এবং কাশ্মীর ইস্যুতে ইরানের মত প্রভাবশালী একটি মুসলিম দেশের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য ভারত উদগ্রীব। কিন্তু এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতিতে ভারত ও ইরান যে ভিন্ন দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে তা স্পষ্ট। বিশেষ করে যে দেশটি এখন ভারতের সবচেয়ে শত্রু দেশে পরিণত হয়েছে সেই চীনের সাথে ইরানের যে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে, তা ভারতের কাছে দু:স্বপ্ন।
তবে ইরান ও ভারতের মধ্যে দূরত্ব একদিনে তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা যত বেড়েছে, ইরানের সাথে ততই দূরত্ব বেড়েছে। সেই শূন্যতা পূরণে ঢুকে পড়েছে চীন। চীন এবং ইরান তাদের মধ্যে ২৫ বছরের একটি ‘কৌশলগত সহযোগিতার‘ চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। এই চুক্তিতে ইরানের তেল-গ্যাস, ব্যাংকিং, টেলিকম, বন্দর উন্নয়ন, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীন আগামী ২৫ বছরে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের আগ্রহে পাকিস্তানের সাথে ইরানের সম্পর্কে যেভাবে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে তা ভারতের জন্য বাড়তি মাথাব্যথা। কারণ, ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে ভারত তাদের প্রভাব কতটা ধরে রাখতে পারবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর।