ডেস্ক নিউজ
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ১৪ লাখ। অথচ ওই সময়ের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির কাছে লাইসেন্স ছাপানোর জন্য হাতে ছিল মাত্র এক লাখ কার্ড। তাই এই সময়টাতে বাধ্য হয়েই ‘জরুরি প্রয়োজনের ভিত্তিতে’ লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বর্তমানে কার্ড ছাপার অপেক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না, এমন আবেদনকারীর সংখ্যা ১২ লাখ ৪৫ হাজার। চলতি বছরের মে থেকে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তবে নতুন আবেদনের বাইরে আগের আবেদনের লাইসেন্স দিতে পারছে না এই প্রতিষ্ঠান।
এমন পরিস্থিতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জট খুলতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কার্যাদেশের প্রক্রিয়া শেষ করবে বিআরটিএ। আগামী অক্টোবর থেকেই ছাপার কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিআরটিএর বিশ্বস্ত সূত্র কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ছাপার কাজ শুরু করার পর পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে জমে থাকা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। আর নতুন আবেদনের লাইসেন্স দেওয়ার কাজটি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সই করবে।
২০১৬ সালের টাইগার আইটির সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করে বিআরটিএ। এই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ১৫ লাখ লাইসেন্স প্রিন্ট দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার চাপ বেড়ে যায়। ফলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই টাইগার আইটিকে ১৪ লাখ লাইসেন্স প্রিন্ট করতে হয়। এরপর কার্ডসংকটের কারণেই মূলত লাইসেন্সের জট লাগা শুরু হয়।
টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের ২৯ জুলাই নতুন করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সঙ্গে চুক্তি করে বিআরটিএ। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাঁচ বছরে ৪০ লাখ লাইসেন্স দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। কিন্তু সম্প্রতি জমা পড়া আবেদনের বাইরে আগের ঠিকাদারের সময় আটকে থাকা লাইসেন্স নিয়ে কাজ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের আন্তর্জাতিক বিপণন ব্যবস্থাপক পুষ্পরাজ আলফন্সে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর দাবি, জমে থাকা লাইসেন্সের কাজ করার জন্য যেসব তথ্যের প্রয়োজন, সেসব তথ্য আগের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি হস্তান্তর করছে না। এমনকি এ নিয়ে বিআরটিএও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই তাঁরা জমে থাকা লাইসেন্সের কাজ করতে পারছেন না।
বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ২২ জুলাই বিআরটিএকে তথ্য বুঝিয়ে দিয়েছে টাইগার আইটি। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে হস্তান্তর করা হবে। তবে সূত্র বলছে, চলমান কাজ মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স পুরোদমে করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যে পরিমাণ লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোও সব দিতে পারছে না।
বিআরটিএর এমন কথার বিপরীতে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সঙ্গে কালের কণ্ঠ যোগাযোগের চেষ্টা করে। তারা এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ আবেদন নিয়েছে এবং আবেদনের বিপরীতে কত লাইসেন্স প্রদান করেছে? কেন তাদের সময়ে জমা পড়া আবেদন আটকে আছে? কাজ করতে গিয়ে কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে? এমন বেশ কিছু প্রশ্ন করে ২২ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের কাছে একটি ই-মেইল করা হয়, কিন্তু ওই ই-মেইলের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, জমে থাকা লাইসেন্সের কাজ মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স করতে পারবে, এমন সক্ষমতার প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। এই কাজ তাদের দিলে আটকে থাকা লাইসেন্স দিতে অন্তত দুই বছর সময় নেবে। প্রতিষ্ঠানটি মে থেকে লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এই সময়ে যে আবেদনগুলো জমা পড়ছে তারা এগুলো সঠিকভাবে করতে পারলেই হলো।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করতে না পারলেও স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু করেছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। প্রতিদিনই কার্ড প্রিন্টের কাজ চলছে। আশা করা যায়, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। করোনার জন্যও কাজে অনেক ব্যাঘাত হয়েছে।