ডেস্ক নিউজ
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়টি সমগ্র বিশ্বে একটি স্বীকৃত সত্য। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈশ্বিক তাপমাত্রার যে চিত্র আমরা দেখতে পাই, সে অনুযায়ী গত ১০০-১৫০ বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রীর কাছাকাছি।
এই তাপমাত্রা যদি ৩-৪ ডিগ্রি বেড়ে যায় তবে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসবে। এখনি যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যাবে ও অনিশ্চয়তা বাড়বে ।
এই লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে তাপমাত্রা কোন অবস্থাতেই দুই ডিগ্রীর বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামিতে বাংলাদেশ ব্যাপক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কিনা, তা চারটি মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়:
১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ।
২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে ।
৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই চারটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় শীর্ষে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকার প্রধান কারণ হলো, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু।
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে প্রায় ক্ষতির পরিমাণ ২শ’ ৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এর আগেও বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আইলা, নার্গিস সহ অনেক ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। ইতোমধ্যে বৈষয়িক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গ্রহণের পর সরকার কর্তৃক ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯ (বিসিসিএসএপি, ২০০৯) চূড়ান্ত করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিসিসিএসপি ২০০৯ এ বর্ণিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশের অর্থ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা না করে নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরণের তহবিল গঠন বিশ্বে প্রথম যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ট্রাস্ট ফান্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহিষ্ণু প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন।
দেশ ও দেশের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য মহান জাতীয় সংসদে এমন একটি আইন পাশ করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।