ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা জাতিকে গঠনের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা অপরিহার্য। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন এবং প্রথমবারের মতো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এই ক্রীড়া পুরস্কারের মধ্য দিয়ে যেমন শেখ কামালের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে, তেমনি এর মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে মানুষের সম্পৃক্ততাও বাড়বে। সবাই উত্সাহী হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বসভায় মর্যাদা বয়ে আনবে, সেটাই কাম্য।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বক্তৃতার একপর্যায়ে আবেগে আপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ কামালের জন্মদিন। কামাল আমার ছোট। আমরা দুই ভাইবোন পিঠাপিঠি। একসঙ্গেই খেলাধুলা করতাম। একসঙ্গে বড় হয়েছি, একসঙ্গে চলতাম। খেলাধুলা, পড়ালেখা ও ঝগড়াও করেছি। ভালো বোঝাপড়া ছিল আমাদের মধ্যে। যে কোনো কাজে আমার সঙ্গে পরামর্শ করত। একরকম নির্ভর করত আমার ওপর।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ কামালকে বঙ্গবন্ধু বেশি আদর করতেন। কামালের জন্মের পরই বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। ’৫২ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাবার স্নেহ থেকে সে বঞ্চিত ছিল। আমিও ছিলাম। কিন্তু বাবার স্নেহটা সে একদমই পায়নি। তবে বাবা ওকে বেশি আদর করতেন। যেহেতু ছোটবেলায় সে বঞ্চিত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘কামালের বিভিন্ন গুণের মধ্যে সংগঠন করা, এমন কোনো খেলা ছিল না যেখানে তার পারদর্শিতা ছিল না। সংস্কৃতিচর্চায়ও সে যথেষ্ট পারদর্শী ছিল। ছায়ানট যখন হলো, আমরা সবাই তার সদস্য হলাম। কামাল সেতার, আমি ভায়োলিন, জামাল গিটার আর রেহানা গান শিখত। আমরা ছেড়ে দিলেও সে ধরে রাখে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী গড়ে তোলে কামাল। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। অদ্ভুত সাংগঠনিক দক্ষতা ওর মধ্যে ছিল। ঢাবিতে ছেলেমেয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে চলতে পারায় কামালের অবদান আছে।’
শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবাকে তো প্রায়ই গ্রেফতার করা হতো। ছয় দফা দেওয়ার পর কামালের আন্দোলনের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আসলে আজকে আমাদের সংগীতাঙ্গনে যে আধ্যাত্মিক বা ফোক গান আধুনিক সংগীতের সঙ্গে সুর করে প্রচার করা হয়, এতে কামালের অবদান ছিল।’
মুক্তিযুদ্ধকালে শেখ কামালের কার্যক্রম স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের মঞ্চেও কামাল ছিলেন। ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সুলতানা-কামালের সংসার আর করা হলো না। তাদের জীবনটা অধরাই থেকে গেল। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাক, সেটা চাই। কারণ, একটা জাতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য বা গড়ার জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চা অপরিহার্য। আমাদের শিশু, কিশোর, যুবক ও সবার মেধা কাজে লাগানো উচিত।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত এই পুরস্কারের জন্য সাতটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়। ক্রীড়াবিদ হিসেবে রোমান সানা (আর্চারি), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারোত্তোলন), মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) এবং ক্যা শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে আকবর আলী (ক্রিকেট) ও ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল), ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন/সংস্থা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, আজীবন সম্মাননায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দিন এবং ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এই পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে টোকিও অলিম্পিক গেমস থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।