সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ-পিপিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশে ছয়টি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৫৪ হাজার ১৭৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা (৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান।
কাজিমা, সোজিৎজ ও মারুবেণীর মতো প্রতিষ্ঠান এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করতে ঢাকায় আসবে আগামী মাসে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চতুর্থ বাংলাদেশ-জাপান যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফর্ম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বৈঠকে প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই, নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও অন্যান্য বিষয়ও ঠিক করা হবে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সরকার ১৮টি প্রকল্পের তালিকা পাঠায় জাপান সরকারের কাছে। শিনজো আবের প্রশাসন এর মধ্যে থেকে ছয়টি প্রকল্প বেছে নেয়। তাদের মতে সেগুলোই জাপানের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত।
জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় (এমএলআইটি) প্রতিটি প্রকল্পের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কনসোর্টিয়াম তৈরি করে দিয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকছে একটি বড় প্রতিষ্ঠান। কনসোর্টিয়ামগুলো সাব ওয়ার্কিং গ্রুপ (এসডাব্লিউজি) নামে পরিচিত।
প্রকল্পের কাজ শুরু করতে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকায় তাদের অফিস খুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো টেন্ডার পদ্ধতিতে এসব প্রকল্পের কাজ করছে না। তারা বিনিয়োগ করছে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে।
আগামী মাসের বৈঠকে ঢাকা আরও চারটি প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাব দেবে। যার মধ্যে আছে ভোলা-বরিশাল সেতু এবং পায়রা বন্দরে ডিপ ওয়াটার কনটেইনার টার্মিনাল তৈরি।
দ্বিতীয় মেট্রো রেল
এমআরটি লাইন-২ এর প্রস্তাবিত রুটটি হচ্ছে গাবতলি-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-সাইন্স ল্যাব-নিউ মার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-শহীদ মিনার-পুলিশ সদর দপ্তর-মতিঝিল-কমলাপুর-ডেমরা-চিটাগাং রোড। যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।
মন্ত্রীসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি ইতিমধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে।
এই মেট্রোরেলটি ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করতে এপ্রিল থেকেই দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী অর্থবছরের তহবিল সংগ্রহের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে।”
এই প্রকল্পের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে মারুবেনী করপোরেশন। অংশীদারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্স গ্লোবাল, কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল, সোজিৎজ এবং সুমিটোমো মিতসুই কনস্ট্রাকশন করপোরেশন।
আউটার রিং রোড
আউটার রিং রোডের রুট হবে হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা-গাজীপুর-বাইপাইল-হেমায়েতপুর।
এই প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৪৬ কিলোমিটার নতুন এবং ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান রাস্তার উন্নয়ন কাজ।
এ প্রকল্পের প্রধান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মারুবেণী করপোরেশন। অন্যান্য অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আইএইচআই করপোরেশন, ওবায়েশি করপোরেশন, শিমিজু করপোরেশন এবং তাইসেই করপোরেশন।
মাল্টিমোডাল হাবস
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দুটি মাল্টিমোডাল হাব তৈরি করা হবে। এই স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের চলাচল সহজ করার জন্য সড়ক ও রেল যোগাযোগের পাশাপাশি ফ্লাইওভার থাকবে।
কমলাপুর হাব প্রকল্পের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে কাজিমা এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে হাব প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবে সজিৎজ।
ধীরাশ্রমের কাছে কনটেইনার ডিপো
ঢাকার পূর্ব বাইপাস সড়ক সংলগ্ন ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এটা তৈরি হলে কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোর ওপর চাপ কমবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা পিপিপি অফিস জানিয়েছে, কমলাপুর ডিপোর যে ধারণক্ষমতা তা বাংলাদেশ রেলওয়ের বাড়তে থাকা কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চাপ অদূর ভবিষ্যতে সামলাতে পারবে না।
চারপাশে অনেক স্থাপনা থাকায় কমলাপুর ডিপোর সম্প্রসারণও সম্ভব না। ধারণ ক্ষমতা ছাড়াও দিনের বেলায় বাণিজ্যিক যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাও কঠিন কাজ বলে জানায় পিপিপি অফিস।
প্রস্তাবিত অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোর পরিচালনা ক্ষমতা হবে বিশ ফুট কন্টেইনারের তিন লাখ ৫৪ হাজার ইউনিট। এর প্রধান বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে সোজিৎজ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক
এই প্রকল্পের আওতায় দুই লেনের মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকছে মারুবেণী।