ডেস্ক নিউজ
জামানতবিহীন (ভোক্তাঋণ) ঋণে বড় ছাড় দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ভোক্তাঋণে সাধারণ প্রভিশন ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে ব্যাংকঋণে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানি রেটিং ছাড়া অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ করা হলে সংশ্লিষ্ট ঋণকে শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঝুঁকির মাত্রা বেশি হওয়ায় এসব ঋণে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে বেশি হারে। প্রভিশন হলো, আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষার জন্য ঋণের বিপরীতে বাধ্যতামূলক জমার হার। কয়েকটি খাত ছাড়া প্রায় সব ঋণে সাধারণ প্রভিশন ১ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হয়। সবচেয়ে বেশি হারে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ভোক্তাঋণে। কারণ, কোনো তালিকাভুক্ত রেটিং এজেন্সি দিয়ে এসব ঋণে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হয় না। সাধারণ, সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের এসব ঋণ বেশি হারে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের বেতনের ওপর ভিত্তি করে ভোক্তাঋণ বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের বেতনভাতা কমে গেছে। এতে ভোক্তাঋণের গ্রাহকরা বেকায়দায় পড়ে গেছেন। অনেকের বেতনভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আদায়ও কমে গেছে। ঠিক কী পরিমাণ ঋণ অনাদায়ী রয়েছে বা কী পরিমাণ ঋণখেলাপি হচ্ছে তা ডিসেম্বরের পরে বোঝা যাবে। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না। এ কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ আদায়ের জন্য গ্রাহককে বেশি চাপ দেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৬ শতাংশ হলে এর সাথে ৫ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হলে ভোক্তাঋণ কেউ বিতরণ করতে চাইবেন না। কারণ, ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ কারণে সাধারণ গ্রাহকদের ঋণ বিতরণের জন্য ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশন সংরক্ষণের হার ১ শতাংশ করার দাবি করা হয়েছিল ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভোক্তাঋণে সাধারণ প্রভিশনের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনায় ঋণঝুঁকি বেড়ে যাবে। কারণ, ইতোমধ্যে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, করোনার প্রভাবে বেশির ভাগ গ্রাহকেরই আয় কমে গেছে। অনেকেই কম বেতন দিয়ে নিজেদের সংসার চালাতে পারছেন না। সেখানে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা কারো পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঋণঝুঁকি বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিগত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।