ডেস্ক নিউজ
অর্থবছরের শুরুতে রপ্তানিতে সুখবর মিলল। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৭৮১০ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের রেকর্ড ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভর করে নতুন অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। একক মাস হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি আয় আসল দেশে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘গত অর্থবছরেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। এখন রপ্তানি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে আমাদের যে টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হয়েছে তাতে বিদেশিরা কম ডলার খরচ করে একই মাপের পণ্য আমদানি করতে পারছে। এজন্য রপ্তানি বাড়ছে। তবে এটি কতদিন ধরে রাখা যাবে, সেটি হচ্ছে ব্যাপার। কারণ সাম্প্রতিককালে গ্যাস বিদ্যুতের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাতে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে, তাতে রপ্তানিও কমে যেতে পারে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, জুলাইতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। আগের অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে দেশ, যা ছিল একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৭ শতাংশ। এ বছর জুলাই মাসের মোট রপ্তানির মধ্যে শুধু পোশাক খাত থেকে এসেছে ২৮৮ কোটি ডলার; এ খাতের ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইপিবির তথ্যে বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি বেশি থাকলেও এবার বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে ওভেন পোশাকে। এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। আর নিট খাতে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে টাকার অঙ্কে এগিয়ে আছে নিট খাত। জুলাই মাসে ১৬৫ কোটি ডলারের নিট পোশাক এবং ১২২ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
আবার জুনের তুলনায় জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানি প্রায় ১০০ কোটি ডলার কমে গেছে। গত জুনে বাংলাদেশ ৪৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯৮ কোটি ডলারে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়ে যে অস্হিরতা শুরু হয়েছে, তাতে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যাচ্ছে। এতে সেসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বাড়তি খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এতে ঐ সব দেশে নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বিক্রি কমলে তার প্রভাবও এ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। সদ্যবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ৩৫ শতাংশ।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে যেখানে আমাদের অর্থনীতি আমদানিকৃত মুল্যস্ফীতির মুখোমুখি, ইউরো মার্কিন ডলারের বিপরীতে কমছে, আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এই অবস্থায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে, এটা দেশের জন্য ইতিবাচক।
আমদানি ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ৩১ শতাংশ
এদিকে রপ্তানি বাড়ার সঙ্গে ডলারের ওপর চাপ কমানোর ফলও মিলছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক পণ্যের আমদানি নিরুত্সাহিত করেছে সরকার। ফলে চলতি বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে দেশে মোট আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৫৪৭ কোটি ডলারের পণ্যের, যা জুন মাসের তুলনায় ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের। তবে জুন মাসে অবশ্য মে মাসের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র ৭ শতাংশ বেশি খোলা হয়েছিল।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এপ্রিল মাস থেকে আমদানি কমতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে মার্চের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। মে মাসেও এপ্রিলের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। মে মাসে ঋণপত্র খোলা হয় ৭৪৪ কোটি ডলারের।