ডেস্ক নিউজ
জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভারতে জ্বালানি তেলের পাচার ঠেকাতে সীমান্তে সতর্কতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। এ সুযোগে মুনাফা লুটতে সীমান্তের চোরাকারবারি সিন্ডিকেট জ¦ালানি তেলও পাচার করছে। এ বিষয়টি নজরে আসার পরই পাচার ঠেকাতে সীমান্তবর্তী প্রশাসনকে নড়েচড়ে বসার নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে জ্বালানি তেল নিয়ে দিনভর নানা গুজব চলে। একটি পেট্রলপাম্পে টাঙানো নোটিশকে কেন্দ্র করে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তেলের রিজার্ভ কমে গেছে; তেল ফুরিয়ে যাচ্ছে; চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে জ্বালানি বিভাগ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, জ্বালানি তেলের কোনো সংকট নেই। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ট্রাস্ট পাম্পে ঝুলানো একটি নোটিশ লেখা হয়েছে, ‘সম্মানিত গ্রাহক, জ্বালানি ব্যবহার সাশ্রয়ের
নিমিত্তে মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকার অকটেন এবং গাড়িতে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকার অকটেন বা ডিজেল নেওয়া যাবে।’ পেট্রলপাম্পের নোটিশটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রিতে কোনো নির্দেশনা জ্বালানি বিভাগ বা বিপিসি থেকে দেওয়া হয়নি। অতি উৎসাহী হয়ে একটি পেট্রলপাম্প এ নোটিশ দিয়েছে। সরকার যেহেতু জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে, সে জন্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে একটি শ্রেণি গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, যথেষ্ট পরিমাণ জ¦ালানি তেলের রিজার্ভ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাস দেশে কী পরিমাণ জ্বালানি তেল লাগবে, সেটা হিসাব করে বিপিসি জ¦ালানি তেল কিনছে। পর্যায়ক্রমে বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আসছে।
তিনি বলেন, সরকারের সাশ্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো গুজব ছড়ানো উচিত নয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ট্রাস্ট পেট্রলপাম্পকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বা জ্বালানি বিভাগ থেকে জ্বালানি তেল কম সরবরাহের কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি। তবে পেট্রলপাম্প মালিকদের সংগঠনের একাংশের নেতারা নিজেরা বৈঠক করে পেট্রলপাম্প থেকে জ¦ালানি তেল কম সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে কিছু পেট্রলপাম্পকে। সংগঠনের নির্দেশনা জারি করা অংশের সভাপতি সাজ্জাদুল করিম কাবুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা পাম্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আগে ডিপো থেকে যে পরিমাণ তেল পাওয়া যেত, তার তুলনায় কম পাচ্ছি। এ কারণে একটু বুঝেশুনে বিক্রির কথা বলেছি আমরা। তিনি বলেন, আমরা বলেছি যাতে সবাই তেল পায়, কেউ ফিরে না যায়, এ জন্য পাম্পে যে তেল আছে, সেটিই ভাগ করে যে পরিমাণ দেওয়া দরকার, সেটুকু দিতে। অনেকেই গাড়ি ভরে তেল নিতে চান, যদিও তা আপাতত দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে পেট্রলপাম্প মালিকদের সংগঠনের আরেক অংশের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা পাইনি। আমরাও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত জারি করিনি। এ মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষকে আতঙ্কিত করবে। মানুষ মনে করবে তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা তখন আতঙ্কিত হয়ে তেল মজুদ করা শুরু করবে। এতে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।’ সরকারের নির্দেশনার বাইরে যারা এসব নোটিশ ঝুলিয়েছে, তাদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক আসে পণ্য নিয়ে। জ্বালানি বিভাগ থেকে সীমান্তবর্তী জেলার জেলা প্রশাসক এবং বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে ভারতের ট্রাকগুলো প্রয়োজনের বেশি তেল নিতে না পারে।
জ্বালানি বিভাগের ওই কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, প্রতি লিটার ডিজেল বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে প্রায় ৩০ টাকা বেশি। ফলে বাংলাদেশে ভারত থেকে আসা ট্রাক ট্যাংকার পুরো লোড করে তেল নিয়ে যায়।
এদিকে বিপিসির মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে, এমন খবরে সোচ্চার অসাধু সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, বেশি মুনাফার লোভে অনেকেই তেল বেশি করে কিনে রিজার্ভ রাখার চেষ্টা করছে, যাতে দাম বাড়লে বিক্রি করতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো বেশি করছেন পেট্রলপাম্পের মালিকরা। এখন থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিয়মিত অভিযান চালানো দরকার, যাতে কেউ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল স্টক করতে না পারেন।