ডেস্ক নিউজ
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বস্ত্রীক টিকা নিয়েছেন, এটা পুরনো খবর। শুধু বিএনপি মহাসচিব নন, বিএনপির আরো কয়েকজন নেতা করোনা টিকা নিয়েছেন। কিন্তু গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন ‘মরে গেলেও’ এই টিকা তিনি নেবেন না। এই না নেয়ার কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে রিজভী বলেছেন ‘যে টিকার বিরোধিতা করেছি, নৈতিক কারণে তা নিতে পারি না।’ শুধু রিজভী একা নন, বিএনপিতে কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও টিকা নেননি। বিএনপিতে যারা আন্দোলনপন্থী হিসেবে পরিচিত তারা এখন দলে টিকা বিরোধী হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছেন। দলের কর্মীদের টিকা দিতে নিরুৎসাহিত করছেন। বিএনপির এই অংশের নেতারা বলছেন ‘সরকারের সাথে যারা গোপনে আপোষ করে, তারাই টিকা নেয়।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের শুরু থেকেই, বিএনপি নানা সমালোচনায় মুখর ছিলো। গত ডিসেম্বরেও বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন ‘সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা হয়েছে।’ জানুয়ারি মাসে সরকার যখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানি নিশ্চিত করে, তখন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এই টিকার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রিজভী বলেন ‘ভারতীয় টিকার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম উৎপাদিত টিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী, গণস্বাস্থ্যের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও। কিন্তু ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হলে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী টিকা নেন এবং সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানান।
এর ফলে বিভ্রান্তির মধ্যে পরে বিএনপি। টিকা নিয়ে বিএনপি যে ঢিমেতালে রাজনীতি শুরু করেছিল, সেই রাজনীতিও থমকে যায়। বিএনপি মহাসচিব রিজভীর মতো টিকার মান নিয়ে কথা না বললেও দাম নিয়ে কথা বলেন। তার বক্তব্য ‘হাস্যকর’ প্রমাণিত হবার পর তিনিও টিকা নেন। এখন বিএনপির আরেক নেতা, টিকা নেয়ার বিরোধিতা করে কার্যত বিএনপির পুরনো বিভক্তিকেই উস্কে দিলো। অন্যান্য ইস্যুর মতো টিকা নিয়েও বিএনপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে এলো। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকা আসলে একটি উপলক্ষ্য মাত্র। বিএনপি এমনিতেই বিভক্ত অবস্থায় আছে। বিএনপির এক অংশ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে। এই অংশের নেতা হলেন, রিজভী-গয়েশ্বর। আর ফখরুল-নজরুল ইসলাম খান সরকারের সঙ্গে আপোষ করে অস্তিত্ব রক্ষার নীতিতে চলছেন। এই দুই পক্ষের বিরোধ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। টিকা নিয়ে বিএনপির দুই নেতার দুরকম বক্তব্য, সেই বিরোধেরই এক ধারাবাহিকতা মাত্র।