নিউজ ডেস্ক : অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয়েও ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়ে সমালোচনা জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকুরীচ্যূত কর্নেল শহিদ উদ্দিন খান। রোববার (২৬ মে) ইংল্যান্ডের জাতীয় ‘দৈনিক দ্যা সানডে টাইম’ শহিদ উদ্দিন খানের টোরি পার্টিকে উৎকোচ প্রদান সংক্রান্ত সমালোচনা ও বাংলাদেশে তার অপরাধ এবং চলমান মামলার বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্তকৃত উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া, জঙ্গি অর্থায়ন, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ পাচারের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শহিদ উদ্দিনের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ জিহাদি বই, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে ইংল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করে শহিদ উদ্দিন খান দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডনে পরিবার সহ বসবাস শুরু করেন। শহিদ এই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন এমপি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড উৎকোচ তথা অনুদান দিয়েছেন বলেও নানা গুঞ্জন শোনা যায়।
এদিকে পলাতক শহিদ উদ্দিনের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতকে পুলিশ লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, গত বছর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, অস্ত্র, আল-কায়েদার সম্পৃক্ত জিহাদি বই এবং জাল মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। এছাড়া তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে এক সময়ে উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী শহিদ উদ্দিন খান এখন যুক্তরাজ্যে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত রয়েছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে শহিদ উদ্দিন খান জোর দাবি জানিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। শহিদ উদ্দিন খান বাংলাদেশ সরকারকে স্বৈরচারী, অপহরণকারী এবং দুর্নীতিপরায়ণ বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি জঙ্গি অর্থায়ন করার মতো গুরুতর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। এছাড়া শহিদ উদ্দিন খান অভিযোগ করেন যে, গত বছর তার ঢাকার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নামে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তার কর্মচারীদের অপহরণ করা হয়েছে। এমনকি তার আইনজীবীদেরও অপহরণ করার অভিযোগ করেছেন তিনি। যদিও দেশটির গণমাধ্যমে শহিদ উদ্দিনের এমন অভিযোগ নিয়ে কোন সংবাদ প্রচার করা হয়নি। সেক্ষেত্রে শহিদ উদ্দিনের এই অভিযোগ একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক বলেই মনে করেছে ইংল্যান্ডের জাতীয় দৈনিক দ্যা সানডে টাইমস।
জানা যায়, দশ বছর পূর্বে শহিদ উদ্দিন খান বিনিয়োগ ভিসা ক্রয় করে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। এই ভিসার বিশেষত্ব হলো, ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে ইউরোপের বাইরের যেকোন দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে তিন বছর ৪ মাস মেয়াদের ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া দুবছর পর বাড়তি আরো ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারবেন যেকোন বিনিয়োগকারী। যদিও তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে অপরাধ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে উইম্বলডন এলাকায় সম্পদ ক্রয় করেছেন শহিদ।
জানা গেছে, চাকুরীচ্যূত সেনা কর্মকর্তা শহিদ উদ্দিন খানের শেহতাজ নামের মেয়ে রয়েছে, যিনি ২০১৭ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে শেহতাজ বাংলাদেশে কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সরকার জোরপূর্বক নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। সরকার জোরপূর্বকভাবে দেশটির নাগরিকদের অত্যাচার করছে এবং নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
যদিও বাংলাদেশের একটি সরকারি নথি দাবি করছে যে, বিগত ১০ বছরে ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি আয় করেছেন শহিদ। এই অভিযোগে বিগত মাসে একটি জালিয়াতি মামলায় তার অনুপস্থিতিতে ৫ বছরের সাজা ঘোষণা করেন আদালত।
বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, শহিদ উদ্দিন খানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২টি বন্দুক, ২টি শটগান, ৭টি জিহাদি বই যার মধ্যে একটি আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরির সম্পর্কিত। এছাড়া বাকি বইগুলো বাংলাদেশে তথাকথিত খলিফার সম্পর্কিত লেখা।
রাজনৈতিক অনুদানের বিষয়ে দ্যা সানডে টাইমস এর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহিদ উদ্দিন খান। যদিও টোরি পার্টির অনুদানের রেজিস্টারে তার নামে অনুদানের অঙ্ক দেখালে শহিদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে তিনি পছন্দ করেন। করণ হ্যামন্ড তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া তার ছোট মেয়ের স্কুলে কাগজপত্র সংক্রান্ত ঝামেলায় একবার হ্যামন্ড সহায়তা করেছিলেন, যার কারণে খুশি হয়ে পার্টি ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছিলেন শহিদ।