ডেস্ক নিউজ
ডিজিটাল মনিটরিং বা আধুনিক নজরদারিতে আনা হচ্ছে দেশের সব গণমাধ্যমের সংবাদ গতিধারাকে। রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী গুজব, অপপ্রচার শনাক্তকরণ ও নিরসনের জন্যই এই পদক্ষেপ। কারণ, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা মিথ্যা তথ্য প্রচারের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সৃষ্টি করছে। গণমাধ্যমের সাথে সমন্বয় ও উন্নতসেবা প্রদান শীর্ষক ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে নজরদারি ফলপ্রসূভাবে করা সম্ভব। এ জন্য সফটওয়্যার, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও হার্ডওয়্যার স্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা ও প্রকল্পের প্রেক্ষাপট থেকে জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নীতি ও কার্যক্রমের যাবতীয় সংবাদ প্রচার করা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংরক্ষণ তথ্য অধিদফতরের অন্যতম একটি কাজ। বর্তমানে দেশে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৩৪টি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১২২টি এফএম রেডিও স্টেশন ও ১৮টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন থেকে অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তৃতিও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা মিথ্যা তথ্য প্রচারের কার্যক্রম সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সৃষ্টি করছে। তবে সনাতনপদ্ধতি বা ম্যানুয়ালি এ সময় গুজব প্রচার শনাক্তকরণ এবং তা নিরসন সম্ভব নয়। এসব কারণেই তথ্য অধিদফতরের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা বা ডিজিটাল আর্কাইভিং ব্যবস্থা খুব দ্রুত স্থাপন করা প্রয়োজন। বর্ণিত এই প্রযুক্তিটি একটি ওয়েব ক্লায়েন্টের মাধ্যমে যেকোনো অবস্থান থেকে তথ্যটিকে সহজেই খুঁজে পাবে। আর সেই তথ্য একাধিক ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই আধুনিক প্রযুক্তিটি মূল প্রকাশনার প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রতিটি তথ্য ও বিষয়কে হুবহু ডিজিটাল অনুলিপি হিসেবে রূপান্তর করবে।
ডিজিটাল আর্কাইভিং সফটওয়্যারটি মূল সংবাদপত্রের চেহারা এবং অনুভূতি ধরে রাখার সাথে তা প্রকাশকের মূল কপিরাইটটিও সংরক্ষণ করবে। এর মাধ্যমে যেকোনো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুচারুরূপে সংরক্ষণ বা আর্কাইভ করা যাবে। প্রয়োজন মতো তা ব্যবহার করা যাবে। সব গণমাধ্যমের সংবাদ গতিধারা সহজেই মনিটরিং করা যাবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। গণমাধ্যমের সাথে সমন্বয় ও উন্নতসেবা প্রদান নামের এই প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অনুমোদনের পর তিন বছরে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, মিডিয়া আর্কাইভিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যানালাইসিস সিস্টেম করা। এখানে সফটওয়্যার, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও হার্ডওয়্যার স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের সব সোশ্যাল মিডিয়া অনলাইন, অফলাইন এবং টিভি চ্যানেলভিত্তিক সংবাদগুলোর নিয়মিত আর্কাইভিং এবং অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে নিজস্ব মিনি ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়মিত নির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করা। রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী গুজব, অপপ্রচার শনাক্তকরণ ও নিরসন।
ব্যয় পর্যালোচনায় কমিশন বলছে, আপ্যায়ন খাতে ৩৬ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ খাতে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, পানি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, ইন্টারনেট ও ফ্যাক্স খাতে ৩৬ লাখ টাকা, স্টেশনারি খাতে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জমাদি মেরামত ৩৫ লাখ টাকা, অফিস সরঞ্জামাদি খাতে ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রাক্কলন অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান ওয়াহিদা খান কার্যপত্রে পর্যালোচনায় বলেছেন, প্রকল্পের আওতায় কোনো গাড়ি কেনা হবে না। তবে দু’টি গাড়ি ভাড়া করা হবে। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। গাড়ি না কিনলেও প্রকল্পের আওতায় গাড়ির জন্য পেট্রল, ওয়েল, লুব্রিকেন্ট খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই খাতটির কোনো প্রয়োজন নেই। তাই এটিকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা বা বেশির ভাগই খরচ হবে কারিগরি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে। তাই এসব আইটেমগুলোর ব্যয় প্রাক্কলনের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে কমিশন থেকে মতামত দেয়া হয়েছে।