ডেস্ক নিউজ
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ী করা হয়। আর এই বেপরোয়া গাড়ি যারা চালান তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ দুই দিন আগে মগবাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ঐ দুই বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের একজন মাদকাসক্ত। ফলে এবার এই মাদকাসক্ত চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বিআরটিএ।
আগামী রবিবার থেকে ডোপ টেস্ট ছাড়া কোনো পেশাদার চালক আর লাইসেন্স পাবেন না। এমনকি নবায়ন করতে গেলেও লাগবে ডোপ টেস্ট। যদিও বিআরটিএর এই ঘোষণার বিষয়টি জানেন না অধিকাংশ চালক। এ নিয়ে কোনো প্রচারণারও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাসমালিকরা বলছেন, এটা বাস্তবায়নের আগে প্রচারণা দরকার। চালকদের মধ্যে সচেতনতা দরকার। চালকদের অনেকেও এই ডোপ টেস্টের পক্ষে।
বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকায় এই ডোপ টেস্টের জন্য ছয়টি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদিত কোনো ল্যাব বা প্রতিষ্ঠান থেকেও ডোপ টেস্ট করা যাবে। ঢাকার হাসপাতালগুলো হলো, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেন্স সেন্টার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই ডোপ টেস্টের কারণে পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে অতিরিক্ত ৯০০ টাকা লাগবে।
বিআরটিএর আদেশে বলা হয়েছে, ৩০ জানুয়ারি থেকে পেশাদার মোটরযান চালকদের নতুন লাইসেন্স গ্রহণ এবং নবায়নের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। লাইসেন্স পেতে হলে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ সনদ দাখিল করতে হবে। অন্যথায় নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে না বা নবায়ন করা হবে না। বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, এখন যারা পেশাদার চালক রয়েছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সব চালককে মানতে হবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, এটা এখন আইন। ৩০ জানুয়ারি থেকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এবং নবায়ন করতে ডোপ টেস্ট লাগবেই। ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত প্রমাণ হলে লাইসেন্স পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ল্যাব টেস্টের বাইরেও কিট টেস্ট আছে। তার মাধ্যমে এখন যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের আমরা টেস্ট করব। এটা হবে অভিযানের মতো। ডোপ টেস্টের জন্য ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি কথা ভাবা হচ্ছে। বিআরটিএর হিসাবে দেশে পেশাদার চালকের সংখ্যা ২০ লাখের মতো।
বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চালকদের ৮৯ ভাগেরই মাদকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এতের কেউ সেবন করেন, কেউবা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে চালকদের অনেকের দাবি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে চালক ও শ্রমিকেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, দীর্ঘক্ষণ পথের মধ্যে থাকাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন তারা। ঢাকা থেকে খুলনা যাতায়াতকারী ঈগল পরিবহনের চালক আব্দুর রহিম বলেন, ডোপ টেস্ট করা হবে সেটা তো এখনো আমরা জানি না। কোথায় ডোপ টেস্ট করা যাবে তাও জানি না। তবে তিনি স্বীকার করেন, ডোপ টেস্ট করা হলে চালকদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্ল্যাহ বলেছেন, করোনার কারণে আমরা এতদিনে এটা শুরু করতে পারিনি। এখন বিআরটিএ একটি আদেশ দিয়েছে ৩০ জানুয়ারি থেকে ডোপ টেস্ট শুরু হবে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো প্রচার নেই। এখন পরিবহন শ্রমিকদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার কারণেই হয়তো ডোপ টেস্ট নিয়ে তেমন কথা হচ্ছে না। তবে এটা ভালো উদ্যোগ। আরেক জন পরিবহন মালিক বলেছেন, প্রস্তুতি না নিয়ে এটা করা হলে চালকেরা বিকল্প পথে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে ভুয়া বা অবৈধ লাইসেন্স বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তার।
ডোপ টেস্টের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের হাসপাতালে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা আছে। সরকারি নির্দেশনা মতো চালকেরা এলে আমরা ডোপ টেস্ট করব। তবে আমাদের সক্ষমতা বেশি নয়। আমরা স্বল্প পরিসরে করি। লোকবলেরও অভাব আছে। আমরা সীমিত পরিসরে টেস্ট করে দিতে পারব।