ডেস্ক নিউজ
ঢাকার নদীরক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে করে নদী খনন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে। করোনার অচলাবস্থা কাটিয়ে আবারোও দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকার চারপাশের নদীরক্ষা প্রকল্পের কাজ। ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে নদী রক্ষার এই উদ্যোগ। তবে কাজের মান ও সীমানা পিলার নিয়ে আছে অভিযোগ। ঢাকার চারপাশে ৫২ কিলোমিটারের মধ্যে এমন খাড়া পাড় করা হবে ২১ কিলোমিটারে। এছাড়া স্থায়ীভাবে নদী দখল বন্ধে ১০ হাজার ৮শ’ সীমানা পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকার চারপাশের নদীর রূপ এমনই। যা বাস্তব করতে, গত দুইবছরের বেশ সময় ধরে দখলদারের বিরুদ্ধে চলছে শক্ত অভিযান। পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে, নদী রক্ষা প্রকল্পের কাজও। নদীর যে সব জায়গা নিয়ে এতদিন চোর-পুলিশ খেলা চলতো প্রশাসন আর দখলদারদের মাঝে। সেখানে এখন ৬০ ফুট গভীর পাইলিংয়ের উপর ৮ ফুট চওড়া ফুটপাথ। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের পাশের এই অংশের,৩ কিলোমিটার ফুটপাথের কাজ প্রায় শেষ। ৫২ কিলোমিটারের এই পথের মধ্যে শিগগিরই শুরু হবে, আরো ২৪ কিলোমিটারের নির্মাণযজ্ঞ। এ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। উচ্ছেদ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)।
এদিকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প কাজের মান ও সীমানা পিলার বসানো নিয়ে উঠেছে নানা অভিযোগ। পণ্য ওঠা-নামার জন্য ৬টি জেটি নির্মাণের কাজও চলছে পুরোদমে। হয়েছে কি-ওয়াল কিংবা খাড়া পাড়ও। ঢাকার চারপাশের ১১০ কিলোমিটার পথে বসানো হবে। সাড়ে ৭ হাজার স্থায়ী সীমানা পিলার এরইমধ্যে কাজ শেষ ৩ হাজারের বেশির।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলছেন, বিশাল এই কর্মযজ্ঞে ছোট ত্রæটি-বিচ্যুতি হলেও তা সমাধান করেই কাজ এগিয়ে চলছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত। তিনি বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদের সময় সাধারণ মানুষ খুশি হয়েছে। নির্মাণ কাজেও তারা খুশি।
ঢাকার চারপাশের নদী তীর রক্ষা প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম বলেন, এগিয়ে চলছে ঢাকার চারপাশের নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যেই গত তিন মাসে বসানো হয়েছে প্রায় ১৪শ’ ৫০টি স্থায়ী সীমানা পিলার ও প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় পাড়ঘেঁষা দেয়াল। তুরাগ পাড়ের ৫/৬টি হাউজিংয়ের অবৈধ অংশ অপসারণ করে চলছে নদী প্রশস্ত করার কাজও। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থায়ী সীমানা পিলার বসাতে গিয়ে প্রায়ই দখলদারদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভ‚মির অবৈধ দখল রোধ করা, দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্যবর্ধন, নদীর উভয় তীরের পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন করা, নদীর দখলমুক্ত তীরভ‚মিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবহার করা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করাসহ জনসাধারণের জন্য নদীর তীরভ‚মি উন্মুক্ত করা। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত।
গত ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডবিøউটিএ। এ সময়ে চার হাজার ৫৩৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ১৬৫ একর নদীর তীরভ‚মির জায়গা উদ্ধার করা হয়। ঢাকা নদী বন্দরের আওতায় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ নবেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত চলমান অভিযানে মোট উচ্ছেদকৃত স্থাপনা সাত হাজার ১০৮টি, মোট উদ্ধারকৃত নদীর তীরভ‚মির জায়গা ১৮১.৭৫ একর, মোট জরিমানার টাকা আদায় করা হয় ৪১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, মোট নিলামে বিক্রি করা হয় ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার সম্পদ। উচ্ছেদের সময় মামলা করা হয় দুটি এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ১২ জনকে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, নদী দখল ও দূষণরোধে ঢাকা শহরের চারদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও ভ‚মি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ১০ হাজার ৪৪২টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। নদীর সীমানার সঠিকতা নিরূপণে যৌথ জরিপকাজ চলমান রয়েছে। নদীর তীরভ‚মির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। ঢাকা শহরের চারদিকে ১১০ কিমি. নৌপথের ২২০ কিমি. নদীর তীর রক্ষা বাঁধসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত ভ‚মিতে ২০ কিমি. ওয়াকওয়ে, বনায়ন, সীমানা পিলার ও দুটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিআইডবিøউটিএর ড্রেজিং বিভাগের সহায়তায় তুরাগ পাড়ের বেশ কিছু হাউজিংয়ের অবৈধ অংশ অপসারণের কাজও চলছে বেশ জোরেসোরে। দখলদারদের বাধা উপেক্ষা করে যে কোনো মূল্যে নদীতীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্পে সংশ্লিষ্টারা।
বিআইডবিøউটিএ ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলো যাতে আর কোনো স্থাপনা তৈরি না করতে পারে, সেজন্য নদীর প্রশস্ততার কাজ চলছে। নদী প্রশস্ত করতে হলে প্রায় ৭০ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করার প্রয়োজন হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে ৮৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার কাজ প্রারয় শেষ হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি নতুন কাজ যুক্ত হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মোট ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীতীরে ১০ হাজার ৮২০টি সীমানাখুঁটি বসানোর কাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় বসানো হবে ৩ হাজার ৮০৩টি খুঁটি। বাকি সীমানাখুঁটি টঙ্গী বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সীমানায় বসানো কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি পার্কও করার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে সদরঘাট ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এক কিলোমিটারজুড়ে পর্যটন পার্ক, আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন, মিরপুর বড় বাজার ও টঙ্গী বন্দর এলাকায় ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ চলছে।
এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচর রায়েরবাজার খাল থেকে বছিলা পর্যন্ত আট কিলোমিটার বুড়িগঙ্গা নদীর উভয় তীরে হাঁটাপথ নির্মাণ ও নদীর পাড় বাঁধ দেওয়া কাজ শুরু হয়েছে। মিরপুর বড় বাজার এলাকায় তুরাগ নদের উভয় তীরে আট কিলোমিটার, টঙ্গী এলাকাতে পাঁচ কিলোমিটার, ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে পাঁচ কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের ডিপিডিসি এলাকায় ছয় কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় ছয় কিলোমিটার হাঁটার পথ নির্মাণের কাজ চলছে। হাঁটার পথ নির্মাণের পাশাপাশি এসব এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, বনায়ন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে। উচ্ছেদকৃত তীরভ‚মিতে ১৯টি আরসিসি জেটিও নির্মাণ করবে সংস্থাটি। এর মধ্যে ঢাকা নদীবন্দরের সীমানার মধ্যে ১০টি এবং নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সীমানা নয়টি জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের মধ্যে সদরঘাট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় ৪ মিটার করে নদী খননের কাজ প্রায় শেষ। ১০০ মিটার করে প্রশস্ততা বাড়ানো হয়েছে।